এক পিডিকে একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব না দেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-০৭-০২ ১৭:০৯:৪৯


প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগের পর প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসাথে এক পিডিকে একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব না দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার। এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম ও প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে সচিব বলেন, ঢাকার আশপাশে কৃষি জমি দেখা যায় আবাসন কাজ হচ্ছে। যেখানে কিছু জমি আছে কৃষি কাজ যেন ব্যহত না হয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণ বিশেষভাবে দেখতে হবে। পুনর্বাসন কঠিন কাজ। তিন ফসলি এলাকায় প্রকল্প নেওয়া যাবে না কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। বাজেট বাস্তবায়ন সুচারো করতে হবে। শেষ মুহূর্তে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্পের কী অবস্থা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে সচিব বলেন, দেশের আবহাওয়া পরিবেশগত যে ধারণা বা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে বন্যা হতে পারে। সেরকম পূর্বাভাসও পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে সত্যজিত কর্মকার বলেন, পুলিশের থানার অবস্থা বেহাল। যারা আমাদের নিরাপত্তা দেয় তারা যদি অনিরাপদ থাকে তাহলে তারা কীভাবে নিরাপত্তা দেবে। এজন্য দেশের সব ঝুঁকিপূর্ণ থানা উন্নয়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বাজেট দেওয়ার সময় বৃষ্টি হয় কাজ করা যায় না। এই সময়ে প্রস্তুতিমূলক ও পেপার কাজ শেষ করে বৃষ্টি থামার পর মূল কাজ করতে পারি সেই উদ্যোগ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জমি অধিকাংশ চলে যাচ্ছে আবাসন প্রকল্পের জন্য। তবে যেসব জমি এখনও আছে সেগুলো যাতে ফাঁকা পড়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব এলাকায় তিন ফসলি বা দো ফসলি জমিতে ফসল ভাল হয় সেসব এলাকায় প্রকল্প নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, ‘যোগ করেন সচিব’।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে প্রকল্পের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, যেহেতু বৃষ্টির কারণে মাঠে প্রকল্পের কাজ করা যায় না সেজন্য কাগুজে প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কাজের মান নিশ্চিত করতে সবারই দায়িত্ব আছে। আগামী ৪ জুন সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। যাতে প্রকল্পের কাজ দ্রুত হয়। এ বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে। ২০৪১ সালের দিকে উন্নয়নশীল দেশে চলে আসব আমরা। এজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

এর আগে, একনেক সভায় ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকার অর্থায়ন (জিওবি) করবে ৫ হাজার ২১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ১৪০ কোটি ৪৪ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থাকছে ১০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা।

অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলো: কৃষি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের “ঢাকা অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘বরগুনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং “মুন্সিগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের “রায়পুরা ১২০ মেগাওয়াট (এসি) পিক গ্রীড টাইড সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্প। শিল্প মন্ত্রণালয়ের “বিসিক মুদ্রণ শিল্প নগরী’ প্রকল্প। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের “শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, কিশোরগঞ্জ, আয়পুরহাট ও চট্টগ্রাম স্থাপন প্রকল্প, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন” প্রকল্প।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের “কুমিল্লা-সালদা কসবা (সৈয়দাবাদ) সড়ককে (এন ১১৪) জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীতকরণ” প্রকল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের “নগরাঞ্চলের ভবন সুরক্ষা’ প্রকল্প। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের “বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের “দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের থানার প্রশাসনিক কাম ব্যারাক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

একনেকে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম; বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র. আ. ম উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, কৃষিমন্ত্রী মো: আব্দুস শহীদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভায় অংশ নেন।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. এমদাদউল্লাহ মিয়ান, কৃষি, পানি পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী এবং তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এএ