ঈদ-উল-আযহার জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া।ঈদের জামাতকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জানিয়েছেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান।
গত ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় ঈদ-উল-ফিতরের জামাতের পূর্বে জঙ্গি হামলার পর বেশ কিছুদিন থমথমে ছিল শোলাকিয়ার আশপাশ এলাকা। মানুষের মাঝে বিরাজ ছিল চাপা আতংক। কোন কিছুতেই যেন ভয় আর ভয়াল দৃশ্য শোলাকিয়াবাসী পিছু ছাড়ছিল না। দেখতে দেখতে চলে গেল দুটি মাস। এরই মাঝে আবার ঈদ-উল-আযহার প্রস্তুতি।
এবার শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদ-উল-আযহার ১৮৯তম জামাত। ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। গত ঈদুল ফিতরের দিন নামাজ পড়াতে তিনি কিশোরগঞ্জে পৌঁছালেও জঙ্গিদের হামলার পর মাঠে যেতে পারেননি। তাই জামাতে ইমামতি না করেই তিনি ঢাকায় ফিরে যেতে বাধ্য হন।
জেলা প্রশাসক বলেন, গত ঈদে অপ্রত্যাশিত জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঈদকে ঘিরে সব প্রস্তুতি শেষের দিকে রয়েছে। তিনি জননিরাপত্তার স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপে সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান জানান, সবকিছু মাথায় রেখে এবার শোলাকিয়ায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বিজিবি, র্যাব-পুলিশ, এপিবিএন ও আনসার সদস্য। তাছাড়া সাদাপোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাঠের ভেতর ও বাইরে কাজ করবে। ঈদের দিন মাঠের তিন দিকের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। মাঠের সামনের দুটি গেট দিয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশির পর মুসল্লিদের মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে। মাঠ ঘিরে থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি।
গতকাল শনিবার দুপুরে শোলাকিয়া মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশ বাহিনী এরই মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ সময় এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ‘ঈদুল ফিতরে জঙ্গিদের হামলার কথা তারা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।’ কেউ কেউ বলছেন, নিরাপত্তা যতই জোরদার করা হোক না কেন- মন থেকে সেই ভয় কোনোদিনই যাবে না। সঙ্গতকারণে এবার শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অনেক কম লোকের সমাগম হবে।
উল্লেখ্য, গত ৭জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে শোলাকিয়ার ঈদগাহের পাশে পুলিশের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলা ও চাপাতির কোপে নিহত হন পুলিশের দুই সদস্য জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক। পরে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের প্রচ- গোলাগুলি হয়। এতে নিজের ঘরে থাকা ঝর্ণা রাণী সূত্রধর নামে এক গৃহবধূ নিহত হন। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে শফিউল ইসলাম নামে আরেক জঙ্গি। কিছুদিন পর ময়মনসিংহের নান্দাইলে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় শফিউল।