আমাদের সবার ধারণা একটি ভালো ফরম্যাট পেলেই বুঝি সবাই ইন্টারভিউ দিতে ডাকবে। খুব সহজ করে বলি, পৃথিবীতে হাজার হাজার ফরম্যাট রয়েছে। গুগোলে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু আপনি কি আজও বানাতে পেরেছেন মনের মত সিভি?
পৃথিবীর সব সিভি ফরম্যাটগুলো লক্ষ্য করে দেখুন। সব সিভির ফরম্যাটে আপনাকে নাম, ঠিকানা, কন্ট্যাক্ট, স্কাইপি, লিঙ্কডইন ইত্যাদি দিতে বলবে। আপনাকে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লিখতে বলবে। আপনার কাজগুলো ফুটিয়ে তুলতে বলবে। একাডেমিক ও প্রফেশনাল অর্জনগুলো উল্লেখ করতে হবে। আপনি কী কী ট্রেনিং করেছেন সেসব লিখতে হবে। যেমন- কম্পিউটার স্কিল, সফট স্কিল, সফটওয়্যার স্কিল। আপনি যদি কাজই না করেন, তাহলে যত রঙিন ফরম্যাটেই আপনার সিভি দেন না কেন, আপনি কি ইন্টারভিউ কল পাওয়ার যোগ্য?
ফ্রেসাররা একটু বেশিই ফরম্যাট খোঁজেন। কিন্তু নিজের কাজের প্রতি বা কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের প্রতি খুবই উদাসীন। ফ্রেসারদের উদ্দেশে বলছি, আপনি গ্রাজুয়েট হয়েছেন ২৫ বছর বয়সে। এই ২৫ বছরে কি আপনার অভিজ্ঞতা হয়নি? আপনি কি গ্রাজুয়েশনের ৪ বছর নিয়মিত ল্যাব রিপোর্ট, পেপার তৈরি করেননি, তাহলে কেন আপনি কোম্পানির জন্য রিপোর্ট করতে পারবেন না? আপনি কি গ্রুপে রিপোর্ট তৈরি করেননি, তাহলে কেন আপনি টিম ওয়ার্কার নন? আপনি কি কোথাও ঘুরতে যাননি, তাহলে কেন আপনি ওয়েল কমিউনিকেটর নন? ভেবে দেখুন, সবকিছু আপনার মধ্যেই আছে। শুধু জায়গামতো ব্যবহার করতে পারছেন না।
আপনার কাছ থেকে একজন ইন্টারভিউয়ার কিন্তু এসবই শুনতে চান। ফ্রেসাররা অভিজ্ঞতাশূন্য নন। তাদের ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। তারা ১০ বছর স্কুলে, ২ বছর কলেজে, ৪ বছর গ্রাজুয়েশন ও ২ বছর মাস্টার্স পড়েছেন। ২৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাকে দুই পেজে আপনার সিভিতে ফুটিয়ে তুলুন। আপনার চাকরি হবেই। ইন্টার্নশিপ অথবা ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট থাকলে সেগুলো লিখুন।
লেখাটি তৈরির সময় আমি দশজন মানব সম্পদ বিভাগের লোকের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা কেউই রঙিন সিভিকে মূল্য দেন না। ফরম্যাট বিষয়কে অতোটা গুরুত্ব দেন না। সবাই কাজকে মূল্যায়ন করেন। তবে একেবারেই দৃষ্টিকটু কোন ফরম্যাট, অতিরিক্ত স্পেসিং, বড় বড় ফন্ট ব্যবহার করা কোনো বাড়তি সুবিধা এনে দেয় না। ফ্রেসার থেকে শুরু করে অন্তত ৮ বছর চাকরি করা পর্যন্ত সিভি ২ পৃষ্ঠায় ও এরপর ৯-২৫ বছর যাদের চাকরির বয়স তাদের ক্ষেত্রে ৩ পৃষ্ঠার সিভিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
যারা জব করছেন তাদের ক্ষেত্রেও ফরম্যাটের চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করা হয় কাজ। সিভিতে তাদের উচিত তাদের পারদর্শিতা, সাফল্য ও কর্মদক্ষতাগুলোকে তুলে ধরা। আপনি কি করেছেন? কতটা নিখুঁতভাবে করেছেন? কতটা কম সময়ে করেছেন? কতটা কম বাজেটে করেছেন? কতজনের টিম নিয়ে কাজ করেছেন? কত টাকা কোম্পানির সেভ করেছেন? এভাবে আপনাকে কাজের বর্ণনা লিখতে হবে।
কাজের বর্ণনাগুলো হতে হবে স্মার্ট। ফরম্যাট নয়, সিভিতে বেশি খেয়াল করা হয় অ্যাচিভমেন্টগুলো। মনে রাখবেন, এক বছর ক্লাস করা একজন ছাত্রের নিত্যদিনের কাজ। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষায় পাস করে নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়াটা তার সাফল্য। তেমনই আপনারাও নিত্যদিনের কাজ এবং সাফল্যকে আলাদা ভাবে তুলে ধরুন সিভির মধ্যে। পাওয়ারফুল ওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন। গুগল সার্চ করলেই সিভির জন্য পেয়ে যাবেন অনেক পাওয়ারফুল ওয়ার্ড।
অনেকে আছেন একই সিভি চালিয়ে দিচ্ছেন সেলস, মার্কেটিং, ব্রান্ডিং, অ্যাকাউন্ট যেকোনো চাকরির জন্য। আপনি জীবনে কী হতে চান আগে সময় নিয়ে ভাবুন। সিভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ক্যারিয়ার প্লান। সঠিকভাবে সেটি গুছিয়ে লিখুন। সিভির কিলার ফ্রেজগুলো ব্যবহার করবেন না। অবজেক্টিভ হতে হবে শুধুই কাজ করার মেন্টালিটি। চাই, প্রয়োজন, দেন, খুঁজছি এগুলো দুর্বলদের কথা।
সিভিতে ট্রেনিংকে খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। নিজেকে দক্ষ করতে ট্রেনিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। যারা পড়াশোনা করছেন, তাদের উচিত পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সসেল, গ্রাফিক্সের উপরে টুকটাক ট্রেনিং করা। যারা ইংরেজিতে দুর্বল, ঝালাই করে নিন। সময়টা কাজে লাগান। যাদের ট্রেনিং করা আছে তারা ট্রেনিং এর হেডিং, ট্রেনারের নামসহ সিভিতে উল্লেখ করুন। দুনিয়ার সকল ফরম্যাটই তথ্য চায়, আপনি কি করেছেন সেটা জানতে চায়। সেটাকে ফোকাস করুন। তাহলে যেকোনো ফরম্যাটই ব্যবহার করুন না কেন, আপনার জব হবে।
সর্বোপরি মনে রাখবেন, শুধু ফরম্যাট নয়, কাজগুলোকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলাটাই সিভির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
লেখক : সিইও, কর্পোরেট আস্ক এবং ট্রেইনার ও প্রফেশনাল সিভি রাইটার। ই-মেইল: niazabeed@gmail.com
সানবিডি/ঢাকা/জাগোনিউজ/এসএস