রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির আত্মহত্যার ঘটনায় তার সাবেক স্বামী একই বিভাগের শিক্ষক তানভীর আহমেদ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন তার ফেসবুক পেজে। শুক্রবার আকতার জাহান জলি আত্মহত্যার সময় রেখে যাওয়া নোটে তার সাবেক স্বামীর প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কথা বলে গেছেন।
এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শনিবার ময়নাতদন্তের পর মতিহার থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা হলে তানভীর আহমেদ নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সামাজিক মাধ্যমে। ফেসবুকে তানভীর আহমেদ লিখেছেন, 'শুক্রবার থেকে মিডিয়াসহ অনেকেরই কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। তাই কিছু উত্তরও এখানে দিয়ে রাখলাম।
আমাদের জীবনে সমস্যার সূত্রপাত ২০১০ সালে। আমার সাবেক স্ত্রী আকতার জাহান বিভাগের এক জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চান। বিষয়টি আমার সহকর্মীরাসহ রাবি ক্যাম্পাসের অনেকেই জানেন। ফলে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমরা মিউচুয়ালি আলাদা হয়ে যাই। তিনি আমাদের সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান।
কিন্তু প্রায় দু’সপ্তাহ পরেই ছেলেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন এবং জানান যে, শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি ছেলের দায়িত্ব নিতে পারছেন না। আমাদের ছেলে তখন ক্লাস ফোরে উঠেছে। পরবর্তী বছরগুলোতে আমি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনুরোধ জানালেও নিজের অসুস্থতার কারণে তিনি ছেলেকে নিজের কাছে নিতে অপরাগতা জানিয়েছিলেন।
তখন থেকে ২০১৬-এর ৩০ মে পর্যন্ত ছেলে আমার কাছেই ছিল। তবে প্রতিটি ঈদ ও স্কুলের ভ্যাকেশনে মায়ের সঙ্গে নানিবাড়িতে যেত। সে রাজশাহীর প্যারামাউন্ট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। সম্প্রতি তার মা তাকে ঢাকার স্কুলে পড়াশোনা করানোর ইচ্ছা আমার কাছে জানান। আমার কাছেও এটি সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ভালো প্রস্তাব মনে হয়।
ঢাকার স্কুলটিতে সেশন জানুয়ারিতে শুরু হওয়ায় আগামী জানুয়ারিতে তার ক্লাস নাইনে ভর্তি হওয়ার কথা। ২০১১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আকতার জাহানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ ছিল না। ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট তিনি অফিসিয়ালি ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠান। আমিও তাতে সম্মতি দিই।
এই ৫ বছরে তার ব্যক্তিগত জীবন-যাপন, ভালো-মন্দ কোনো কিছুর সঙ্গেই আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। তিনি নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমি তাতে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে চাইনি। তিনি (জলি) নিঃসন্দেহে একজন ভালো শিক্ষক, সহকর্মীদের কাছে একজন ভালো সহকর্মী এবং ছাত্রদের কাছে মাতৃতুল্য অভিভাবক।
আমার সঙ্গে তার বহু আগেই শেষ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিগত সম্পর্কের থেকে মুখ্য হল তিনি এই ৫ বছরে যাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তার বর্তমান সময়ের সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে তারাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আমি মোটেই সঠিক ব্যক্তি নই।' তানভীর আহমদের এই স্ট্যাটাসে প্রথম মন্তব্য লেখেন তার সাবেক শিক্ষার্থী তানজিমুল হক। এতে তিনি লেখেন, স্যার কোনো কমেন্ট করছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার কিছু আগে ম্যাম জয়েন করেছেন।
তবে সাংবাদিকতার কারণে অনেক কিছুই আমাদের নজরে রয়েছে। এ কারণে কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না। তবে আপনারা শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু আপনাদের সম্পর্কে যেসব কথাবার্তা ক্যাম্পাসে চাউর হয়, তা অত্যন্ত বেদনায়ক। সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এগুলো আমাদের কাম্য না ...। শাহাজাদী সুলতানা নামে এক নারী মন্তব্য করেন, একটা অংক মিলছে না।
আপনার ভাষ্যমতে, ম্যাডামের সঙ্গে সমস্যা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে, ম্যাডামের কারণে! তো আপনার বর্তমান বউ তো ২০১০-এর অনেক আগেই পাস করে চলে যাওয়ার কথা। তাইলে পাইলেন কেমনে? অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বুঝি?! আপনারা অনেক জ্ঞানী! তাই বলে আমরা কি অনেক বোকা? মিনতি করি মৃত মানুষটিকে মুক্তি দিন। তিনি আপনার সন্তানের মা।
নিজের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ছেলেটাকে কতটা কষ্ট আর লজ্জায় ফেলছেন একটু ভাবুন। শিক্ষক জলি জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন তানভীর আহমদের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করে মামুন-অর-রশিদ লিখেছেন, স্যার আপনি নিজের অবস্থান জানিয়েছেন ভালো, তবে এ একটি বিষয় না লিখলেই পারতেন।
সৌরভ হাবিব লেখেন, স্যার জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের কোনো প্রমাণ আপনার হাতে কি আছে? থাকলে দিন এবং তার পরিচয়টা জানান। একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এমন মন্তব্য খুবই প্রতিহিংসামূলক মনে হল। তাছাড়া আপনার সহকর্মীরা বলছেন, জীবিত অবস্থাতেও জলি আপা আপনার এমন মন্তব্য থেকে রক্ষা পাননি। তাহলে কি বুঝব এ আত্মহত্যার পেছনে প্ররোচনাদানকারী যে মানুষটির কথা উঠে আসছে তিনি কি... ?’
খালেদ সুজন নামে একজন লেখেন, স্যার, আপনি এবং জলি ম্যাডাম আমার কাছে খুবই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। আমি যখন জেনেছিলাম আপনাদের ডিভোর্স হয়েছে, এত কষ্ট পেয়েছিলাম যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না, আরও কষ্ট পেতাম যখন আপনার নতুন স্ত্রীর সঙ্গে সেলফি দেখতাম, আরও কষ্ট পেতাম যখন জলি ম্যাডামকে নিয়ে আজেবাজে কথা প্রচার হতো যা আপনি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন। শুধু মান অভিমান এবং জেদাজেদির কারণে আজ এই পরিণতি।