মহান ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব জগমোহন ডালমিয়া আর নেই। রোববার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার এমন মৃত্যুতে ক্রিকেট বিশ্ব হারাল একজন দক্ষ সংগঠককে। ভারত হারাল তাদের তিন-তিনবারের সভাপতিকে। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও হারিয়েছে তাদের প্রাক্তন সভাপতিকে। আর বাংলাদেশ হারিয়েছে ক্রিকেটে তাদের পরম এক বন্ধুকে।
বাংলাদেশের টেস্ট ট্যাস্টাস পাওয়া থেকে শুরু করে যেকোনো কঠিন সময়ে ডালমিয়া বুক চিতিয়ে সমর্থন দিয়েছেন। সবশেষ গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের সাথে অন্যায় করার পর ভারতের সঙ্গে যখন সম্পর্কের অবণতি হতে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে সবকিছু সামাল দিয়েছেন ডালমিয়া। অটুট রেখেছেন ভারত-বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরম বন্ধু।
জগমোহন ডালমিয়া ১৯৪০ সালের ৩০ মে ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশুনা করেছেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে। সে সময় তিনি ছিলেন কলকাতার কলেজ ক্লাবের উইকেটরক্ষক। কলেজ জীবনেই তিনি দ্বিশতক হাঁকিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি তার বাবার ব্যবসা ‘এমএল ডালমিয়া এন্ড কোম্পানি’তে যোগ দেন।
ক্রিকেটের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল ডালমিয়ার। তাই ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে পারেননি। প্রাণের টানে ১৯৭৯ সালে যোগ দেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে। পরে ১৯৮৩ সালে বিসিসিআইয়ের কোষাধ্যক্ষ হন তিনি। ১৯৯৭ সালে নির্বাচিত হন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির সভাপতি।
সেখানে টানা তিন বছর সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নে নানা কর্মকা- হাতে নেন ডালমিয়া। তারই ধারাবাহিকতায় টাইগারদের টেস্ট মর্যাদা দেওয়ার জন্য সদস্য দেশগুলোকে চাপ দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ডালমিয়া আইসিসিতে থাকাকালীন সময়েই টেস্ট মর্যাদা পায় বাংলাদেশ।
এরপর ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন ডালমিয়া। তারপর নির্বাচনে হেরে সরে যান ক্রিকেট থেকে। ব্যস্ত ছিলেন নিজের ব্যবসার কাজে। কিন্তু ২০১৩ সালে শ্রীনিবাসন সরে যাবার পর অন্তবর্তীকালীন সভাপতি হন এই ক্রিকেট প্রশাসক। তবে, এ বছর আবারও বিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচন হলে প্রার্থী হন ডালমিয়া। সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ছিলেন।
ডালমিয়ার প্রচেষ্টাতেই ইংল্যান্ডের বাইরে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়। ক্রিকেট থেকে এখন যে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় হচ্ছে, সেই ক্রিকেটের বাণিজ্যিকীকরণের প্রথম পদক্ষেপটি নিয়েছিলেন তিনিই। ক্রিকেটের বিশ্বায়নেও তার ভূমিকা ছিল স্মরণীয়।
২০০৫ সালে গ্লোবাল স্পোর্টস থেকে আজীবন সম্মাননা পান খ্যাতিমান এই ক্রিকেট সংগঠক।