জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আনুমানিক দুই শতাধিক। সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এদিন বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
এ সময় মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। তীব্র গোলাগুলির একপর্যায়ে প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়। তাঁরা এখন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আজ বুধবার সকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি।
দুপুরে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন রেজিস্ট্রার আবু হাসান। এ সময় তাঁকে জুতা নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তারা প্রশাসনিক ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর চালায়। দিনভর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড গড়ে তোলে আন্দোলনকারীরা।
এদিকে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দ্র শিক্ষার্থীদের ব্যারিকেড তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা।
এরপর বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে থাকা পুলিশ সদস্যরা মুরাদ চত্বর থেকে হটিয়ে দেয় শিক্ষার্থীদের। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে গত সোমবার সন্ধ্যা থেকেই ক্যাম্পাস ছাড়তে থাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গভীর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সন্ধানে তল্লাশি চালায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দখলে থাকা ১৯টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আমরা জড়ো হয়ে মিছিলে স্লোগান দিচ্ছিলাম। পরে দুপুর ১২টা থেকে আমাদের মুখোমুখি দাঁড়ায় পুলিশ। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই তারা ৫টার পর থেকে আমাদের ওপর হামলা শুরু করে।
এ বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়লে আমি কোনো দায় নেব না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমার পক্ষে ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভব হবে না।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দিলে তা-ও প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিকেল ৪টার মধ্যে আবাসিক হল ত্যাগের সময়সীমা অতিক্রম হলেও শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিএইচ