ঘড়ির কাটায় আটটা বাজে। কয়েকজন শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে পথচলা। কাছে এসে জানতে চাইলে, সোয়া আটটায় ক্লাস শুরু বলে ছুটতে থাকে রবীন্দ্র ভবনের দিকে। তাদেরই একজন সোহাগ হোসেন। কথা হয় তার সঙ্গে, তিনি বলছিলেন রাতে এসেছি ছুটি শেষে। এখন ক্লাস করতে যাচ্ছি। ঈদের পরে বাড়ি থেকে আসতে মন চাইছিলো না। কিন্তু ক্যাম্পাসে এসে নিজের একাকিত্বের অনুভবটা হারিয়ে গেছে। আর এখন তো নিয়মের জীবনে একটু নিজেকে মানিয়ে নিতে হবেই।
একটু পরেই টুকিটাকি চত্বরের পাশে চোখে পড়লো একটি জটলা। কাছে যেতেই শোনা গেলো- ‘কিরে কেমন আছিস বন্ধু? ঈদ কেমন কাটলো?’ বন্ধুকে এমন প্রশ্ন করছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২য় বর্ষের নুর হোসেন। বন্ধুকে বুকে টেনে নিলেন সমাজ কর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী তারিক আল হাসান। বললেন, ‘পরিবারের সঙ্গে কেটেছে এক রকম, তবে তোদের খুব মিস করেছি। ফেসবুকে দেয়া তোর ছবিটা কিন্তু দারুণ হয়েছিলো রে।’ জমে গেলো গল্পের আসর। পাশ থেকে যুক্ত হলেন আরো কয়েক জন।
পবিত্র ঈদ-উল-আযহার ১২ দিনের ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার পর এমনি গল্প আর আড্ডায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ছুটির পর ক্যাম্পাস আবারো মুখরিত হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। ছুটি শেষে ইতোমধ্যে সোমবার ক্লাশ-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের আগমনে আবারো প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে মতিহারের সবুজ চত্বরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আড্ডার স্থানগুলো এখন কোলাহলপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বর, টুকিটাকি চত্বর, মিডিয়া চত্বর, পুরাতন ফোকলোর মাঠ, সাবাশ বাংলাদেশের মাঠ, শহীদ হবিবুর রহমান হল মাঠ, সিলসিলা রেঁস্তোরাসহ সর্বত্রই শিক্ষার্থীদের জমজমাট আড্ডা।
মিডিয়া চত্বরে আড্ডারত পরিসংখ্যান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা বলেন, ঈদের ছুটি শেষে পরিবার ছেড়ে আসতে খারাপ লাগলেও ক্যাম্পাসে বন্ধুদের পেয়ে এখন অনেক ভালো লাগছে। অনেকদিন পর ক্লাস শেষে বসে আড্ডা দিচ্ছি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার চত্বরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের আড্ডাকে পরিণত করছেন গ্রুপ স্টাডিতে। সবমিলিয়ে সবুজ ঘেরা ক্যাম্পাসে আবারো প্রাণ ফিরে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি, বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, যথাসময়ে ক্লাস আরম্ভ হলেও সব বিভাগে পরিপূর্ণ ক্লাস হয়নি। প্রায় সব বিভাগেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির প্রসঙ্গে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আল ইমরান বলেন, দীর্ঘ দিন ছুটি শেষে ক্লাস শুরু হওয়ায় অনেকে এখনো বাড়ি থেকে আসেনি। তাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম। তবে দু-একদিনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
এদিকে ছুটি শেষে হল খোলার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ফিরছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে সব হলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী চলে এসেছেন। শিক্ষার্থীরা ফিরে আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর আশেপাশের বিভিন্ন দোকানগুলো খোলা হয়েছে। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারো ব্যবসায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ক্যাম্পাসের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
ঈদু-উল-আযহা উপলক্ষে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাবির সকল ক্লাস-পরিক্ষা বন্ধ ছিল। এছাড়া ১০ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসসমূহ বন্ধ ছিল।
সানবিডি/ঢাকা/হৃদয়/এসএস