পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীচ হ্যাচারীর কোনো বিনিয়োগকারী কখনো কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে জানিয়েছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাবিদ ইসলাম। তিনি বলেন, কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানির অগ্রগতি দেখে কিছু লোক পেছনে লেগেছে। একই সাথে তাদের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে নেতিবাচক খবর ছড়ানো হচ্ছে।ভুল তথ্য ছড়িয়ে বীচ হ্যাচারীর সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তিনি বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যও আহ্বান জানান।
প্রশ্ন: বীচ হ্যাচারীর শুরু ও কার্যক্রম
এমডি: ১৯৯৭ সালে বীচ হ্যাচারী যাত্রা শুরু করে এবং ২০০০ সাল থেকে উৎপাদন শুরু হয়। শুরুতে বাগদা চিংড়ি দিয়ে কাজ শুরু হয়। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বৃদ্ধির জন্য ২০০২ সালে কোম্পানি আইপিওতে যায়। প্রতিবছর ২২-২৩ কোটি পোনা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। পোনা বাজারজাত করা হয় খুলনা, সাতক্ষীরা, পাইকগাছা ও ফকিরহাট এলাকায়।
প্রশ্ন: বীচ হ্যাচারীর প্রধান প্রজেক্টের বর্তমান অবস্থা ও পরিকল্পনা
এমডি: বর্তমানে কক্সবাজারের ইনানীতে তাদের প্রধান প্রজেক্টে ২০০টি টাংকি রয়েছে, যার মধ্যে ১০০টিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। এছাড়াও, নতুন ১০০টি টাংকি তৈরির জন্য জায়গা রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই টাংকিগুলোতে মাছ উৎপাদন শুরু করা হবে।
প্রশ্ন: কোরাল প্রজেক্ট?
এমডি: কোরাল সামুদ্রিক মাছ, তা মিষ্টি পানিতে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে কোরাল প্রজেক্ট শুরু করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি বর্তমানে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই শুরু হবে। এর জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন: সাদা মাছের প্রকল্পের কী অবস্থা?
এমডি: চাঁদপুরে ৩.৪ একর জমি লিজ নিয়ে একটি নতুন সাদা মাছ উৎপাদন প্রকল্প শুরু করেছে। যার খবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রকল্পটি বছর শেষে কোম্পানির আয়ে ও ইপিএসে (EPS) যোগ হবে।
প্রশ্ন: বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস ও কোম্পানির অগ্রগতি
এমডি: কোরাল প্রজেক্ট নিয়ে ছড়ানো ভুল তথ্যের কারণে কোম্পানির সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা চলছে, তবে প্রকল্পটি লাভজনক হবে। তিনি মিথ্যা প্রচারণার নিন্দা করে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বীচ হ্যাচারী সবসময় বিনিয়োগকারীদের প্রাধান্য দিয়ে আসছে এবং বিগত বছরগুলোতে ক্যাশ ডিভিডেন্ট প্রদান করে আসছে। নতুন প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে, যা শিগগিরই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
প্রশ্ন: মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের ক্ষতি কিভাবে পূরণ করবেন?
এমডি: মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের সময় কোম্পানির প্রায় ৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, যার ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এই বিষয়টি আদালতে চলমান এবং এটি নিষ্পত্তি হলে শেয়ারহোল্ডারদের সবকিছু জানানো হবে। তিনি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেন যে, তারা কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না এবং তাদের প্রাপ্য সময়মতো পাবেন।
প্রশ্ন: হ্যাচারী খাতের বর্তমান অবস্থা কী?
এমডি: সাতক্ষীরার কিছু ব্যক্তি নিজেদের হ্যাচারী করার পরিকল্পনা করেছিলেন, তবে তারা জানতেন না যে, হ্যাচারীর জন্য সি ওয়াটার বা লবণাক্ত পানি প্রয়োজন। তাদের হ্যাচারীগুলোতে ভাইরাস আক্রমণ করে অনেক ঘের নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় বীচ হ্যাচারী থাইল্যান্ড থেকে মা চিংড়ি আমদানি করত। হ্যাচারী খাত এখন অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দেশে উৎপাদিত পোনা বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
প্রশ্ন: হ্যাচারী খাতের চ্যালেঞ্জ কী?
এমডি: হ্যাচারী খাতের জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এই খাতের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, তবে এখনও কোনো ফলাফল আসেনি। এছাড়াও, ব্যাংক লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদে লোন নিতে বাধ্য হন, যা তাদের জন্য অসুবিধাজনক।
প্রশ্ন: সিন্ডিকেটের প্রভাব ও করণীয় কী?
এমডি:হ্যাচারী খাতে কিছু সিন্ডিকেট গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যারা কম দামে পোনা কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে। এর ফলে হ্যাচারী মালিকরা কম দাম পাচ্ছেন এবং ঘেরের মালিকদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তিনি এই সিন্ডিকেট ভাঙার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
প্রশ্ন: বীচ হ্যাচারীর সুনাম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
এমডি:হ্যাচারী খাতে বীচ হ্যাচারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং সবসময়ই কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দেয়। বীচ হ্যাচারীর বাজারে অনেক সুনাম রয়েছে, যা তাদের মানসম্মত পণ্যের কারণে অর্জিত হয়েছে।