বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসাতে পারে: এডিবি
প্রকাশিত - সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬ ৫:৩৮ পিএম
চলতি বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার সাত দশমিক এক হতে আগামী বছর ২০১৭ সাল নাগাদ ছয় দশমিক ৯ শতাংশে নেমে যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। চলতি বছর অর্থাত্ ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে সরকারি হিসেবে সাত দশমিক এক শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এডিবি উল্লেখ করেছে, এজন্য সহায়ক তথ্যে গরমিল রয়েছে। কেননা বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় খুব একটা বাড়েনি। কৃষি প্রবৃদ্ধিও কমেছে। তবে বেড়েছে সরকারি ব্যয়। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে নীট রফতানি প্রবৃদ্ধি সহায়ক হতে পারে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক হ্রাস সত্ত্বেও ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি এবং সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো করেছে। গতকাল এশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে পূর্বাভাস প্রতিবেদন হালনাগাদ করে প্রকাশ করে এডিবি। এতে বাংলাদেশ নিয়ে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থনীতির গতি সঠিক পথে রাখার জন্য অগ্রাধিকার অবকাঠামোর প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
বিদায়ী অর্থবছর (২০১৫-১৬) দেশের প্রবৃদ্ধি সাত দশমিক এক শতাংশ হওয়ার প্রাথমিক তথ্য দিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। এটি ছয় দশমিক সাত শতাংশের পূর্বাভাস দিয়েছিল এডিবি। আগের অর্থবছরে ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল বিনিয়োগ যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ দশমিক চার ভাগ। বেসরকারি বিনিয়োগ আগের অবস্থানেই রয়েছে। প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ছে সামান্য। কৃষি প্রবৃদ্ধি হয়েছে দুই দশমিক ছয় ভাগ। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকায় ২০১৫ সালে দুই দশমিক আট বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দেওয়া হলেও ২০১৬ সালে তা কমে দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য কম থাকা, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ সরকারের ঘাটতি কমে আসা প্রবৃদ্ধি সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছে এডিবি। আগামী বছর অর্থাত্ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ছয় দশমিক ৯ শতাংশে। এজন্য টেকসই বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা মূলত সময়মতো অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর নির্ভর করে। সেইসঙ্গে ব্যবসায়িক আস্থা অর্জনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়াসহ আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিগুলো উল্লেখ করেছে এডিবি।
প্রতিবেদনে এশিয়ার অন্যান্য দেশ নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি ও আগামী বছর উন্নয়নশীল এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হতে পারে পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ। ২০১৫ সালে এই হার ছিল পাঁচ দশমিক ৯ ভাগ। তবে ভারতের অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবার আশা করছে এডিবি। চলতি বছর ভারতে প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাত দশমিক চার ভাগ। আগামী ২০১৭ সালে এই হার সাত দশমিক আট ভাগে উন্নীত হতে পারে।
এডিবির পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে, শিল্প খাতের উন্নয়নে ধীরগতি হতে পারে। বিশ্বের বড় অর্থনীতির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের প্রবৃদ্ধি এবছর হতে পারে এক দশমকি চার শতাংশ হারে। তবে পরবর্তী বছর এটি এক দশমিক আট শতাংশ হতে পারে। অন্যদিকে এশিয়ার বড় অর্থনীতির দেশ চীনের প্রবৃদ্ধি নেমে আসার আশঙ্কা করা হয়েছে। এবছর চীনের প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক ছয় থেকে আগামী বছর আরো কমে ছয় দশমিক চার হতে পারে। ভারতের অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কার তাদের প্রবৃদ্ধি সহায়ক হচ্ছে, এর ফলে আগামী বছর প্রবৃদ্ধি আরো বৃদ্ধির আশা করছে এডিবি।
মূলত বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কম থাকার প্রভাব পড়ছে মধ্য এশিয়ায় অর্থনীতির ওপর। আগামী বছরও জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের দাম কম থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতিও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর। এ বছর গড় মূল্যস্ফীতির হার দুই দশমিক ছয় থেকে আগামী বছর কিছুটা বেড়ে দুই দশমিক ৯ হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থনীতির ঝুঁকিগুলো হ্রাস পাচ্ছে ধীরে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর উন্নয়নে ধীরগতি, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাওয়া এশিয়ার কিছু অঞ্চলের জন্য শঙ্কা উল্লেখ করেছে এডিবি। চলতি বছর ছয় মাসে বেশিরভাগ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশের রফতানি কমেছে। বাংলাদেশ থেকেও গার্মেন্টস পণ্যের বড় রফতানি চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের বড় দুর্যোগে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার বিবরণও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যায় ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় সেসময় বাংলাদেশে ক্ষতি হয়েছিল প্রায় চার দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের মতো। এ ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির আট দশমিক ছয় ভাগ ছিল। শুধু ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ছয় বিলিয়ন ডলার। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে বলে আশা করছে এডিবি। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে গড় প্রবৃদ্ধি এ বছর ছয় দশমিক ৯ থেকে আগামী বছর সাত দশমিক তিন হবার আশা করছে সংস্থাটি।
সানবিডি/ঢাকা/.এসএস
Copyright © 2024 Sunbd24 - Latest News Update About DSE, CSE Stock market.. All rights reserved.