জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জন করার ও দুর্বলবান্ধব হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকেরা। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় সম্পাদকেরা এ পরামর্শ দেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক ওই মতবিনিময়ের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও ইংরেজি দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বাধীন। আইনে কমিশনকে যে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, জনগণের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণে সেটি কাজে লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাধা এলে গণমাধ্যম কমিশনের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, সমাজে যাঁরা ক্ষমতাবান, তাঁরাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেন। শুধু প্রচার নয়, কমিশনের লক্ষ্য হতে হবে কমিশনকে শক্তিশালী করে জনগণের আস্থা অর্জন করা।
দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সরওয়ার বলেন, সরকার মানবাধিকার কমিশন গঠন করে। কমিশন গঠিত হওয়ার পর তা আর সরকারের নয়, জনগণের। শুধু কথা নয়, সবার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। শুধু কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। মানবাধিকার কমিশনের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার শিরদাঁড়া কতটুকু শক্ত, আমরা দেখতে চাই।’
কলাম লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের অনেকগুলো শক্তি বা সংস্থা আছে। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দেখতে শুধু মানবাধিকার কমিশন আছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে হতে হবে দুর্বলবান্ধব। কমিশনকে সব সময় দুর্বলের পাশে থাকতে হবে। দুর্বলের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে সবলের ওপর দুর্বলবান্ধব এই কমিশন কতটা কঠোর হতে পারে, সেটার ওপর নির্ভর করবে এর সাফল্য।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাদের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে, এতে আরও গুণগত পরিবর্তন এনে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো কোনো বিষয় তুললে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইব, আন্তর্জাতিক সংস্থার আগেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিজেরাই তুলে ধরে সেগুলো প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে।’ পাশাপাশি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য মানবাধিকার কমিশনকে প্রচারাভিযান চালানোরও পরামর্শ দেন তিনি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, ধর্মের নামেই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।
সম্পাদকদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মানবাধিকার কমিশন দুর্বলের পাশে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু জনবলের দিক থেকে এখনো কমিশন শিশু অবস্থায় আছে। কিছু সময়ের প্রয়োজন আছে। তারপরও কমিশন চেষ্টা করছে। তিনি যেকোনো বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে কমিশনের সঙ্গে যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবৃতি প্রচারের ক্ষেত্রেও কমিশনের সঙ্গে যাচাই করার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, তারা (আন্তর্জাতিক সংস্থা) কোনো একটা বার্তা দিলে সেটা নিজেরা যাচাই-বাছাই করার। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকল, তারা কোনো বার্তা দিলে আপনারা আমাদের সঙ্গে ভেরিফাই করে নেবেন। তারপর আপনারা যেটা লিখবেন, সেটা আপনাদের মতো লিখবেনই।’
অন্যদের মধ্যে একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সময় টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক মোস্তফা দানিশ প্রমুখ বক্তব্য দেন। মানবাধিকার কমিশনের অন্য সদস্যরাও মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।