আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাঠ প্রশাসনের জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে খুব শিগগির প্রত্যাহার হওয়া জেলাগুলোতে নতুন ডিসি নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ডিসি নিয়োগ শেষে বিভাগীয় কমিশনার পদেও আনা হবে রদবদল।
সরকার গত ২০ আগস্ট ২৫ জেলা থেকে ডিসিদের প্রত্যাহার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও দপ্তরে সংযুক্ত করে। ২০ আগস্ট ২৫ জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রত্যাহার করা হলেও এখনো নতুন ডিসি পদায়ন হয়নি। কয়েক দিন ধরেই ডিসিদের ফিট লিস্টের অংশ হিসেবে সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে।
জেলায় সিভিল প্রশাসনের প্রধান হলেন জেলা প্রশাসক। স্থানীয় প্রশাসন তদারকি এবং জনসেবা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তারা। জেলা পরিষদ ও পৌরসভার দায়িত্ব থাকায় ডিসিদের এখন অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করতে হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, নিজেদের পচ্ছন্দ মতো জেলায় পোস্টিং পাওয়ার জন্য জোর তদবির চালাচ্ছে কেউ কেউ। এ তালাকা ২৫তম ব্যাচের কয়েকজন মিলে করেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, ২৫ জনের তালিকায় থাকা নামগুলো হলো- নুরজাহান খানম, সাইফুল ইসলাম,হোসনা আফরোজা, মো. জসিম উদ্দিন, রেবেকা খান, মো. মাহাবুব আলম, মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম,মো. মনিরুজ্জামান, মো. শাহীনুর আলম, মোহাম্মদ সাইফুল হাসান, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. আবুল হাসান, কামরুজ্জামান, রাসেল মনজুর, মো. শফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ অতুল মন্ডল, বদরুল হাসান লিটন, মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান, মো. শাহীন হোসাইন, ড. মো. ফরিদুর রহমান, মোহাম্মদ মাহবুব আলম, খন্দকার ফরহাদ আহমেদ, আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ এবং মো. মামুনুর রশিদ।
ডিসি নিয়োগের বিষয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, দেশের ২৫ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) গত ২০ আগস্ট প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এসব জেলার নতুন ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, ডিসি পদায়নের প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা ফিটলিস্ট নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়ার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। “আমার এখানে আসার মাত্র ছয় দিন হয়েছে। ফিটলিস্ট তৈরির জন্য প্রতিদিন ১০ মিনিট করে সময় দিলে এটি সময় সাপেক্ষ। ৬০০ অফিসারের একটি তালিকা রয়েছে, সেই তালিকা থেকে আমরা ফিটলিস্ট তৈরি করছি। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আর একদিন লাগবে। এরপর আমরা ২৫ জন নতুন ডিসি নিয়োগের সামারি প্রস্তুত করব।” তবে, এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলেও জানান তিনি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে রদবদল শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রত্যাহার হওয়া ডিসিরা অনেক স্থানেই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। তবে নতুন ডিসি নিয়োগ না হওয়ায় মাঠ প্রশাসনের কাজেও বিড়ম্বনা হচ্ছে। কয়েক দিন ধরেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছিল প্রত্যাহার হওয়া জেলাগুলোয় ডিসি নিয়োগ নিয়ে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসূত্র জানান, অনেক স্থানেই মাঠ প্রশাসনে কাজের কিছুটা ব্যত্যয় হওয়াটা স্বাভাবিক। পর্যায়ক্রমে সব ডিসিকেই মাঠ থেকে উঠিয়ে আনা হবে। শিগগির নতুন কিছু ডিসি নিয়োগ পাবে মনে করছি। কয়েক জেলার ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেসব কর্মকর্তা বর্তমানে রয়েছেন, তারা আর মাঠে থাকতে চাচ্ছেন না। তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এসব কর্মকর্তার মাধ্যমেই একতরফা নির্বাচন করা, বিরোধী পক্ষকে দমনপীড়নসহ বিভিন্ন অনিয়ম করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা এখন মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালনে অস্বস্তিতে রয়েছেন।
জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলায় ডিসি পদে বর্তমানে তিনটি ব্যাচের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। ২৪, ২৫ ও ২৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তা ডিসি হিসেবে আছেন। সাধারণত ডিসি পদে দুই বছর হওয়ার পর তাদের বদলি বা পরিবর্তন করা হয়। ২৪তম ব্যাচের ডিসিদের অনেকের দুই বছর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী, ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের থেকে বেশি ডিসি হওয়ার কথা থাকলেও ২৪ ও ২৫ ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকেই বলছেন পুরনো সরকার তাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করেনি। তাদের রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে ডিসি হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এজন্য এসব ব্যাচ থেকেই বেশি ডিসি করার আলোচনা রয়েছে।
সব ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে বিভাগীয় কমিশনারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরও বদলি করা হবে। আট বিভাগের মধ্যে ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কমিশনার ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। বাকি ছয় বিভাগে ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভাগীয় কমিশনারদের পরিবর্তনসহ কাদের দায়িত্ব দেওয়া যায় তা নিয়েও কাজ চলছে বলে জানা গেছে।