সপ্তাহ গড়ালেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। সময় যত ঘনিয়ে আসছে দলটির এ সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনা ততই বাড়ছে। রাজনীতি, আগামী নির্বাচন, কূটনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে সবমহলেই আসন্ন সম্মেলন নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
সম্মেলনে শীর্ষে নেতৃত্বে চমক না থাকলেও, বিদেশি অতিথিদের নিয়ে যে চমক দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ, তা দলীয় নেতাকর্মীদের নানা আলোচনাতেই উঠে আসছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে ‘ভারত চমক’ অধিক গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী নাকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি অর্থাৎ কংগ্রেস নাকি বিজেপি গুরুত্ব পাচ্ছে, এটিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন ঘিরে অন্যতম চমক।
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, বিদেশিরা যারা আসছেন, তারা সবাই আমাদের কাছে মেহমান। মেহমানদের কাউকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের কংগ্রেসের বন্ধন ঐতিহাসিক। স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পরে এই সম্পর্ক যেন আরো মজবুত হয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের দোতুয়ালি তাই প্রমাণ করেছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনবিমুখ এইচএম এরশাদকে আওয়ামী লীগের স্বার্থে কিভাবে নির্বাচনে আনা যায়, তা কংগ্রেসের পররাষ্ট্রনীতি দেখিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে রাজনীতি, অর্থনীতি, আঞ্চলিক নীতিতে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ভারতের কংগ্রেসের কাছে পরিক্ষিত বন্ধু।
অন্যদিকে ক্ষমতার পালাবদলে দেশটির বিজেপি সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কে ভাটা পড়ে বলে চাউর রয়েছে। এবার সেটাও উবে গেছে। বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের মোদি সরকারের পররাষ্ট্রনীতির কোনোই হেরফের হয়নি। বরং নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি যে আশায় ঘর বেঁধেছিল, তা গুঁড়েবালিতে রূপ নিয়েছে পর মুহূর্তেই। মোদির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ হালে গভীর পানি পেয়েছে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।
সঙ্গত কারণে আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে ভারতের উপস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরাও।
নরেন্দ্র মোদি এবং সোনিয়া গান্ধী উভয়কেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে। দল হিসেবেও বিজেপি এবং কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ জানোনো হয়েছে। ভারতের কে আসতে পারেন এবারে সম্মেলনে? সোনিয়া নাকি নরেন্দ্র মোদি? যদি এই দুই নেতা না আসেন, তাহলে কে করতে পারেন তাদের প্রতিনিধিত্ব? অথবা গুরুত্বই বা কে পাবে? এমন সব জল্পনা-কল্পনা এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বইছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ভারত বাংলাদেশের পরিক্ষিত বন্ধু আর কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লগের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। তবে বিজেপি সরকারের সঙ্গেও বাংলাদেশ সরকারের এখন মধুর সম্পর্ক। আমরা দল নয়, দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্ককেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে প্রতিটি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা। আমরা তাই করছি। কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়কেই আমরা দাওয়াত করেছি। তারা উভয়ই প্রতিনিধি পাঠাবে বলে আমরা আশাবাদী। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। সেই বন্ধুত্ব আরো ঘনিষ্ট করতে ভারতও আন্তরিক। আমরা সেটাকে মর্যাদার চোখে দেখে আসছি।