অধিনায়ক মাশরাফিকে এখন পৃথিবী মূল্যায়ন করতে শিখে গেছে। তারপরও একটা সমস্যা থেকে গিয়েছিল, পারফরমার মাশরাফির গুরুত্বটা অনেকে বুঝে উঠতে পারছিল না। মাশরাফি নিজে এসব নিয়ে ভাবেন না। তবে একসাথে যেনো সব প্রশ্নের জবাব দিলেন। প্রায় দুই বছর পর ম্যাচসেরা হলেন, অনেকদিন পর ৪ উইকেট পেলেন, র্যাংকিংয়ে সেরা অবস্থানে, দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হলেন! নিজের এই সব অর্জন নিয়ে এবং দলের মূল্যায়ন নিয়ে মুখোমুখি হলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। জাতীয় দলের সীমিত ওভারের অধিনায়কের একান্ত সাক্ষাত্কার নিয়েছেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। এই সময়ে এসে এটা ভাবতে কেমন লাগে?
ব্যাপারটা তো ভালো। তবে কে ওপরে, কে নিচে; এ নিয়ে ভাবতে আসলেই ভালো লাগে না। খেলতে থাকলে একসময় কেউ না কেউ তো সবচেয়ে বেশি উইকেট পাবেই। আমি তো এসব নিয়ে ভাবি না। কেউ বললে শুনি।
সাকিবকে টপকে গেলেন। সে বিশ্বের এখন অন্যতম সেরা বোলার...
বিশ্ব জুড়েই তো এখন টপকে যাওয়ার হিসেব। মাশরাফি সাকিবকে টপকে গেলো, এ ওকে টপকে গেলো। আমার কাছে এর তেমন গুরুত্ব নেই।
আপনি আর সাকিব দু’জনই টপকালেন রাজ্জাককে। বন্ধুত্বের বাইরে রাজ্জাককে মিস করেন না?
বন্ধু হিসেবে নয়, খেলোয়াড় হিসেবেই আমি রাজকে হাইলি রেট করি, অনেক রেসপেক্ট করি। গত কয়েকটা বছর তো ও খেলার সুযোগই পাচ্ছে না। এটা ওর দুর্ভাগ্য। মিস তো করিই। ও খেলতে থাকলে হয়তো ওর উইকেট আরও অনেক বেশি হতো। এটা ওর ব্যাডলাক।
উইকেট সংখ্যা, র্যাংকিং এসব নিয়ে একেবারেই ভাবেন না!
ভাবি। আমরা ভাবনাটা ছিল, যদি চার’শ বা পাঁচ’শ উইকেট পেতাম। এখন আমার তো এই বয়সে এসে আর সে স্বপ্ন দেখা সম্ভব না। ইনজুরিগুলো যদি সময়টা নিয়ে না নিতো...। তারপরও আমি নিজের জন্য এসব ভাবি না। আমাদের ছোট যারা আছে, ওদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি। এরা একদিন চার’শ উইকেট পাবে। তখন উইকেট সংখ্যা নিয়ে গর্ব করবো।
র্যাংকিংয়ে আবার সেই ৯ নম্বরে।
হ্যাঁ, ২০০৯ সালে মনে হয় আরেকবার উঠেছিলাম। এটাও শুনলাম ঢাকায় এসে। শুনে ভালোই লেগেছে।
আপনি যখন এক বছরে ৪৯ উইকেট নিয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন, স্বপ্ন সেরা দশে আসার।
হ্যাঁ, মনে আছে। আবাহনী মাঠে বসে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। সে স্বপ্ন তো পূরণ হয়েছিল।
এখন সেই বয়সের মতো আনন্দ হয় এই র্যাংকিংয়ে উন্নতিতে?
সত্যি বললে, না। সেই বয়সে সবকিছু নিয়ে একটা বাড়তি রোমাঞ্চ থাকে। এখন যে কিচ্ছু হয় না, সেটা বললে মিথ্যে বলা হবে। এখন এটা আসলে একটা প্রেরণা। ধরুন, আমি পরিশ্রম করছি। ক্রিকেট প্রতিদিন আগের চেয়ে কঠিন হচ্ছে। এখন একেবারে তরুণরা যেভাবে বল করছে, আমাকে তাদের মতো কার্যকর হতে আরও পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সেই চেষ্টাটা চালাচ্ছি। এর মধ্যে যখন এরকম স্বীকৃতিগুলো আসে, সেটা আরেকটু ভালো করার প্রেরণা দেয়।
প্রায় দুই বছর পর ম্যাচসেরা হলেন, অনেকদিন পর ৪ উইকেট পেলেন, র্যাংকিংয়ে সেরা অবস্থানে, দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। এমন কী মনে হচ্ছে যে, সেই ২০০৮ সালের পরে আবার সেরার কাছাকাছি চলে এসেছেন?
আমি এটা বলতে চাই না। আমি চেষ্টা করছি। পরিশ্রম করছি। তবে ভালো সময়, সেরা সময়; এগুলো নিয়ে ভাবতেও চাই না। আমি অনেক রকম দেখেছি তো। শুধু নিজের কাজটা ঠিকমতো করে যাই।
একটু সিরিজ নিয়ে বলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা না জেতায় আফসোস আছে?
প্রথম ম্যাচটা নিয়ে আফসোস আছে। ওই ম্যাচটা ওখান থেকে না জেতাটা প্রায় অসম্ভব একটা কাজ ছিল। সেটা আমরা করেছি। ওই ম্যাচটা জিতলে তো সিরিজ নিয়ে আফসোস করতে হতো না।
তৃতীয় ম্যাচেও শিশির অমন করে ভূমিকা না রাখলে অন্যরকম হতে পারতো ফলাফল।
সেটা নিয়ে তো আফসোস করা যাবে না। প্রকৃতির ওপর তো কারো হাত নেই। তবে এটা তো সত্যি। আমি ওই দিনও বলেছি, শিশিরটা এর অর্ধেক এফেক্টও যদি করতো, ম্যাচ আমাদের হাতে থাকতো। এটা স্রেফ ব্যাডলাক। কিছু করার নেই। হ্যাঁ, ক্রিকেট খেলে হারলে একটু আফসোস কম হয়। কন্ডিশনের কারণে হেরে গেলে খচখচানিটা থেকে যায়।
শেষ প্রশ্ন। টেস্টে কেমন করবে বাংলাদেশ?
টেস্টে আসলে সবকিছুই নির্ভর করে প্রথম ইনিংসের উপর। আমার অবশ্যই শুভেচ্ছা তাদের সঙ্গে থাকবে। আমার বিশ্বাস আমরা ভালো করবো। আমরা যদি প্রথম ইনিংসে যে কোনো কিছুতে ভালো করি, আমাদের জেতার সুযোগও থাকবে। সূত্র: ইত্তেফাক
সানবিডি/ঢাকা/এসএস