গাজীপুরে ১২ দফা দাবিতে কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভ

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৪-০৯-২৩ ১৩:২৮:০৩


গাজীপুরের সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা ১২ দফা দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে।এসময় সড়কের উভয় পাশে রাজেন্দ্রপুর থেকে মাওনা চৌরাস্তা দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে সড়কে চলাচলকারী যাত্রী, চালক ও স্থানীয়দের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ওই কারখানার শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কারখানার অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নেয়। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে সড়কে যানজট লেগে থাকে। পরে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সকল দাবী মেনে নিলে ১২ টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা জানান, গতকাল তাদের পাশের মন্ডল ইন্টিমেন্টস পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলন করে তাদের দাবী পূরণ হওয়ার পর সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়। ওই কালাখানার শ্রমিকদের মতো আমরাও কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। তাই আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবী আদায়ে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছি। এতে সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং যাত্রী, সাধারণ মানুষ ও চালকেরা ভোগান্তিতে পড়েন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, জয়দেবপুর থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন।

জানা যায়, সোমবার সকালে শ্রমিকরা ১২ দফা জানিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান নেয়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ ৮টি দাবি মেনে নেয়। ১২টি দাবি থেকে ৮টি দাবি মেনে নিলেও বাকী চারটি দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে।

কারখানা কর্তৃপক্ষেরে মেনে নেওয়া দাবীগুলো হলো- হাজিরা বোনাস ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১০০০ টাকা, হেলপার ও সমমনা গ্রেপধারীদের হাজিরা বোনাস ৩০০ টাকার পরিবতে ৮০০ টাকা, টিফিন বিল ২২ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা, নাইট বিল অপারেটর ও সমমনা গ্রেডধারীদের জন্য ৫০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, সমমনা গ্রেডধারী শ্রমিকদের ৭০ টাকা, উপস্থিতির জন্য নির্ধারিত সময় থেকে অতিরিক্ত পাঁচ মিনিট সময় সুবিধা দেওয়া, গালি-গালাজ, হয়রানি ও অপেশাদারমূলক আচরনের অভিযোগ উঠলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেয় কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (বাঘের বাজার জোন) সুমন মিয়া জানান, সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভক করছে। শ্রমিকদের সকল দাবী মেনে নেওয়ার পর তারা দুপুর ১২ টার দিকে সড়ক থেকে সরে গেলে চার ঘন্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এসব বিষয়ে গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেড পোশাক কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) রেজাউল করিম জানান, শ্রমিকদের সকল দাবী-দাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড (খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান) কারখানার শ্রমিকেরা সোমবার সকালে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকেরা আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এ সময় কারখানার ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং কারখানা ভাংচুর চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়। অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানার শ্রমিকেরা রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে বিভিন্ন (১২ দফা) দাবিতে কারখানার ভেতর বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধ ঘোষণা করায় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে ভাংচুর করার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে পৌছে সেনাবাহিনী, থানা পুলিশ এবং শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে কারখানার ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং কারখানা ভাংচুর চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়। সেনা সদস্যরা হ্যান্ডমাইকে শ্রমিকদের কারখানা এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

আন্দেলনরত শ্রমিকেরা জানান, তাঁদের কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের সর্বনিম্ন বেতন দেওয়া হয় ৮ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে এই টাকায় সংসার চালানো ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালানো সম্ভব নয। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে মালিকপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

গত কয়েক দিনে শ্রমিক আন্দোলনে কালিয়াকৈরের বক্তারপুর এলাকার ইকু নিট, সফিপুর বাজার এলাকার মাহমুদ ডেনিমসহ তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার জানান, কারখানা বন্ধ ঘোষণার পরও কয়েকজন উশৃঙ্খল শ্রমিক জোরপূর্বক কারখানার ভেতরে প্রবেশ করায় সেনাব সদস্যরা তিনজনকে আটক করেছেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

বিএইচ