# হুটহাট সিদ্ধান্তে আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা
# লেনদেন চিত্রের কোনো পরিবর্তন নেই
# বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা
[ সার্বিক বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ]
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সদ্য নিয়োগ পাওয়া খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের ওপর আস্থা পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। গত ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ৪২ পয়েন্ট। আর দৈনিক লেনদেনের ধীর গতিতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া অল্প কয়েকদিনের মধ্যে নেয়া কমিশন সংক্রান্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করেছে আস্থার সংকট। অন্যদিকে কোন বিনিয়োগকারী বেশী পরিমাণ শেয়ার কিনলেই বিএসইসি থেকে ফোন দিয়ে কারণ জানতে চাওয়া হয়।
গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর যোগ্য নেতৃত্বে দেশের অর্থবাজার অনেকটা ঘুরে দাঁড়ালেও সংকট থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। দেড় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নিয়োগ নিয়ে ডিএসইর সাথে চলছে এক ধরণের দূরত্ব। আইন ব্যতয় করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আইপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিনুল ইসলামকে। নিজ ক্ষমতায় এক্সচেঞ্জটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে চারবার ভুল সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। একই সাথে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের বিএসইসিতে এনে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বিএসইসি। এটিও পুঁজিবাজারে নতুন ইতিহাস। এর আগে কখনো এই জাতীয় ঘটনা ঘটেনি। এমনকি স্টক এক্সচেঞ্জসহ বাজার মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব অবমূল্যায়ন করায় কমিশনের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্বের তৈরি হয়েছে বাজার-সংশ্লিষ্ট অনেকের মধ্যে।
বিষয়গুলো নিয়ে মূখপাত্রের মাধ্যমে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারিকুজ্জামানের পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর দায় চাপান। তিনি বলেন, কিছু কাজ মন্ত্রণালয়ের সাথে কো-অর্ডিনেটর হয়ে করতে হয়। এই বিষয়ে পাবলিকলি কিছু বলার নেই।
ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে বারবার ভুল এবং বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যান।
রাশেদ কমিশনে আস্থা হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা
বর্তমান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কমিশনের ওপর আস্থা পাচ্ছে না বলে সানবিডিকে জানিয়েছেন একাধিক বিনিয়োগকারী। সুজন শিকদার নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে একটা স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। সব সেক্টর থেকেই স্বৈরাচার দূর করে যোগ্যদের নেতৃত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারের উদারতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ এখানে যাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাদের অনেকের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠছে। ফলে তাদের নেতৃত্বে কীভাবে কমিশন ভালো করতে পারবে এই প্রশ্ন থেকেই যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কমিশন যোগ দেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সূচকের ঊর্ধ্বগতি আমরা লক্ষ্য করিনি। কোনো রকম রুগ্ন অবস্থায় চলছে লেনদেন। এতে করে আমাদের মনে এখনো কোনো আশার আলো জ্বলেনি।’
মাহফুজ ইসলাম নামে একজন বিনিয়োগকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্টক এক্সচেঞ্জে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনের লঙ্ঘন করেন, সে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে? তা-ও এক ভুল একবার করলে মানা যায়। একই ভুল বারবার করার দ্বারা স্পষ্টই বোঝা যায় কমিশনের সক্ষমতা কতটুকু।’
বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা
গত ১৮ আগস্ট কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এরপর থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ডিএসইর সূচক কমেছে ৪২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট। গত ১৮ আগস্ট ডিএসইর সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৭৮ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট। যা কমে গতকাল বুধবার দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৩৬ দশমিক ৫০ পয়েন্ট। সূচক কমার পাশাপাশি কমেছে বাজার মূলধনের পরিমাণও। গত ১৮ আগস্ট বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। যা গতকাল বুধবার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৭৩ কোটিতে। এই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা।
লেনদেনের উন্নতি নেই
চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে লেনদেনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট সীমার ওপরে আর লেনদেন উঠছে না। বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৮ আগস্ট ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এরপর দিন লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় ৮০৭ কোটিতে। এরপর এই কয়দিনে মধ্যে শুধু একদিনই লেনদেন হাজার কোটির ঘর স্পর্শ করতে পেরেছিল। গত ২ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ১ হাজার ৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এরপর আর হাজার কোটিতে লেনদেন হতে দেখা যায়নি। এরপর ৫০০ থেকে ৭০০ কোটির ঘরেই লেনদেন ঘুরতে থাকে। আর সূচক কোনোদিন কমে কোনোদিন অল্প একটু বাড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই সময়ে কোনো ধরনের বড় লাফ দিতে দেখা যায়নি।
হুটহাট সিদ্ধান্ত
গতকাল বুধবার তালিকাভুক্ত ২৭ কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোকে ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগারি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করেছে ডিএসই। কোম্পানিগুলো হলো-অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস , বীচ হ্যাচারী লিমিটেড, দেশ গার্সেন্টস, এডভেন্ট, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, প্যাসিফিক ডেনিমস, ফরচুন, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, লুব-রেফ (বাংলাদেশ), লিব্রা ইনফিউশন, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ন্যাশনাল টিউবস, ন্যাশনাল ব্যাংক, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি, ফার কেমিক্যালস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, এটলাস বাংলাদেশ ও আনলিমা ইয়ার্ন লিমিটেড।
এই কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করেও তা বিনিয়োগকারীদের মাঝে বন্টন করেনি। এই তথ্য ডিএসইর কাছে আরও আগে থেকেই ছিল, তবু কার স্বার্থে এতদিন পর এসে হুট করে ২৭টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটেগরিতে পাঠানো হয়েছে তা অস্পষ্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘হুট করেই এই কোম্পানিগুলোকে জেড ক্যাটেগরিতে পাঠানোর কারণে অনেক শেয়ারের দর একদিনেই ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। কোম্পানিগুলো যে লভ্যাংশ বিতরণ করেনি এই তথ্য বিনিয়োগকারীরা আগে জানতে পারলে এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। এখন এর দায় কে নেবে? বিএসইসি না-কি ডিএসই?
রাশেদ কমিশনের আদ্যোপান্ত
বেসরকারি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান করে বিএসইসির অন্যান্য কমিশনারের পদগুলোও পুনরায় নিয়োগ দিয়ে সাজানো হয়। এতে করে পূর্বের কমিশন থেকে যোগ্য ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কমিশনার এ টি এম তারিকুজ্জামান এবং মোহাম্মদ মোহসিন চৌধুরীসহ পূর্ণ পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। এই পাঁচ সদস্যের মধ্যে কেবল এ টি এম তারিকুজ্জামানের সরাসরি পুঁজিবাজারের সঙ্গে দীর্ঘ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সম্প্রতি এ টি এম তারিকুজ্জামানক ৩ মাস সময় দিয়ে অব্যহতি দিয়েছিলো। এর পরই বিএসইসির চেয়ারম্যান তার সকল দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়। একই সাথে তাকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ আছে চেয়ারম্যনের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি পুরোপুরি অনভিজ্ঞদের নিয়ে চলছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এমনকি অন্যদের পরামর্শ নিয়ে সমন্বয় করার মানসিকতাও কমিশনের বর্তমান নীতি নির্ধারকদের নেই বলে প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের একজন সাবেক পরিচালক বলেন, আমাদের দুঃখের কোন শেষ নেই, আমাদের দুঃখের কথা কার কাছে বলবো। বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তগুলো কেমন যেন অগোছালো হয়েছে। একের পর এক ঘটনা ঘটছে, এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। আমরা বাজারের পুরনো স্টক ব্রোকার। আমাদের দৃষ্টিতে কমিশন থেকে স্বল্পমেয়াদী যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেসব সিদ্ধান্তগুলোতে বাজারের আস্থা ফেরত আনার জন্য নেওয়া দরকার ছিল। বাজারের সব অংশীজনদের একটা প্ল্যাটফর্মে আনার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল। সেখানে আস্থা ফেরাতে যেসব সিদ্ধান্ত দরকার ছিল, তার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে ব্যাপকভাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে যেভাবে ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে এক ধরণের আস্থা ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন, সেখানে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হিসেবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অবস্থা তার পুরো উল্টো। বিশেষ করে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ গঠনে কালক্ষেপন এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান। ফলে ডিএসইর প্রায় ২৪০ এর অধিক সদস্য প্রতিষ্ঠান ও নতুন ট্রেক হোল্ডাররা বিষয়গুলো ভালোভাবে নিচ্ছেন না। ফলে শেয়ারবাজারে অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, ‘বর্তমান কমিশন হয়তো সবাইকে দুর্নীতিবাজ বা খারাপ ভাবছে। তাদের মনে রাখতে হবে, পুঁজিবাজারে কমিশন অভিভাবকতুল্য। অভিভাবক যা করবেন, তাই ঠিক, অন্যদের কথা শোনা বা পরামর্শ নেওয়ার দরকার নেই– এমনটা যদি ভেবে থাকেন, তাহলে তা হবে খুবই ভুল চিন্তা। এমন চিন্তাধারা থেকে যত দ্রুত তারা বের হতে পারবেন, ততই সবার জন্য ভালো।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুঁজিবাজার থেকে বহু টাকা কারসাজির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়েছ। বিশেষ করে দুই কমিশনের সময়ে দুর্নীতির পরিমাণ ছিল আকাশছোঁয়া। এমন পরিস্থিতিতে সরকার পতনের পর পুঁজিবাজারকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে যোগ্য নেতৃত্বের দাবি জানিয়ে আসছিল বাজার সংশ্লিষ্ট সর্বমহল ও বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ বর্তমান কমিশনের চার সদস্যের কমিশনার টিমে কারোই পুঁজিবাজার নিয়ে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সেগুলোকে বিতর্কিত করে দিচ্ছে কমিশন।
গত ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় ডিএসইতে সাত স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করেছিল বিএসইসি। তবে ডিএসইর সাবেক এমডি মাজেদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো. হেলালউদ্দিন ডিএসইর পৃথক দুই ব্রোকারেজ হাউসের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালনের তিন বছর অতিক্রম না করায় আইনের লঙ্ঘন হয় বলে প্রশ্ন ওঠে। এতে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক পদে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় তাদের স্থলে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসী চৌধুরীর অংশীদার এ এফ নেসারউদ্দিন এবং জেড এন কনসালট্যান্টের প্রধান পরামর্শক সৈয়দা জাকেরিন বখ্ত নাসিরকে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। কিন্তু নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসী চৌধুরী নিরীক্ষক এবং জেড এন কনসালট্যান্ট ডিএসইর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আইন অনুযায়ী স্বার্থের সংঘাতের কারণে তারাও দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে। তৃতীয় দফায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসির সাবেক এমডি মোমিনুল ইসলাম এবং বহুজাতিক ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার শাহনাজ সুলতানাকে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। এ দফায়ও প্রশ্ন উঠেছে- আইপিডিসির সাবেক এমডির নিয়োগে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে। কেননা স্টক ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩-এর ৫ ধারার ‘কে’ উপধারায় বলা আছে- কেউ তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক এবং কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করে থাকলে তিনি স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। কিন্তু মোমিনুল ইসলাম এক বছর আগেও তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে বারবার এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার অদক্ষতাকে ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
এদিকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই বিএসইসির সঙ্গে ডিএসইর মনোমালিন্য বা বিতর্ক তৈরি হয়। কারণ, ডিএসইর মতামত ছাড়াই এককভাবে বিএসইসির পক্ষ থেকে সংস্থাটিতে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। অবশ্য কমিশনের পক্ষ থেকে ডিএসইর কাছে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের পূর্বেই নাম চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সুপারিশ আমলে নেয়নি বিএসইসি। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নির্ধারণের দায়িত্ব সংস্থাটির নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটির (এনআরসি) হাতে ন্যস্ত। তবে সরকার পতনের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাজারের উন্নয়নে এক্সচেঞ্জটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে ডিএসইসহ বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু পথ বের করা যেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।