এবার হত্যার হুমকির মুখে পড়লেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চার শিক্ষক। তাদেরকে ফোনে চাঁদা দাবি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হুমকিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক অমৃত লাল বালা, অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী, অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান, সহকারী অধ্যাপক শামসুন নাহার।
তারা জানান, ‘সুব্রত বাইন’ পরিচয়ে ভারতীয় নম্বর ব্যবহার করে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
ইতোমধ্যে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিন শিক্ষক। এছাড়া একই বিভাগের অপর শিক্ষককে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে।
গত ৬ থেকে ১১ অক্টোবর এই হুমকির ঘটনা ঘটে। শিক্ষকরা প্রথমে বিষয়টি চেপে যান। তবে বারবার ফোন দিয়ে একইভাবে হুমকি দেয়ায় তিন শিক্ষক জিডি করেন।
হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, ১১ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভারতীয় নম্বর (৯১৮০১৭৮২২৭২৫) থেকে তার মোবাইলে কল আসে। রিসিভ করতেই ওপার থেকে 'সুব্রত বাইন' পরিচয়ে এক ব্যক্তি চার লাখ টাকা দাবি করে। সে বলে, ‘সাভার ইপিজেডে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আমাদের দলের লোক আহত হয়ে কলকাতায় চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসার জন্য ১৪ লাখ টাকা দরকার। ১০ লাখ টাকা যোগাড় হয়েছে, বাকি চার লাখ আপনাকে দিতে হবে।’
টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সুব্রত বাইন নামধারী ওই ব্যক্তি বলে, ‘রাজশাহীতে আমাদের লোক আছে। দ্রুত টাকা না দিলে আপনার সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে।’ ঘটনার এক ঘন্টা পরই অধ্যাপক মিজানুর রহমান নগরীর মতিহার থানায় গিয়ে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেন।
মিজানুর রহমান খান প্রশ্ন তোলেন, ‘শুধু বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের কেন বেছে নিচ্ছে? চাঁদাবাজ না কি মৌলবাদী। জঙ্গিদের নতুন কৌশল? কারণ পুরো বিভাগ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। আমাদের ছাত্ররা ওভাবেই গড়ে ওঠে।’
প্রথম অ্যালামনাই উপলক্ষে যে স্মরণিকা বের হয়েছে সেখানে সকলের বিস্তারিত ঠিকানা আছে। হুমকিদাতা প্রথমেই বলে, ‘পুজোর ছুটিতে রাজশাহীতে আছেন না জেলায় গেছেন।’ যার যেখানে বাড়ি তা সব বলে দিচ্ছিলো। এমন কি ‘আপনার পোস্টিং তো অমুক জেলায়।’
২০১৪ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩২ জন শিক্ষককে একইভাবে হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিগত ১২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অধ্যাপককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ- এমন হুমকির ঘটনায় শিক্ষা ও গবেষণা কাজে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ফলে ফোনে এমন হুমকির ঘটনায় শঙ্কিত শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যরা।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবীর বলেন, ‘তিন শিক্ষক জিডি করেছেন। তবে অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদীর বিষয়টি জানি না। তিনি জিডি করেননি। হুমকি এসেছে ভারতীয় নম্বর থেকে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিক্ষকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’