চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাত এলাকা রেড জোনে

জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২৪-১০-১২ ১৮:৫৫:৫৫


চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রাম নগরীর জনবহুল এলাকা ও এডিস মশার প্রজনন অনুকূল পরিবেশের কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

ডেঙ্গুর পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের ৭টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এই এলাকাগুলোতে এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ ডেঙ্গু সংক্রমণ বিষয়ক তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকাল ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় ৫৯ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সারা দেশে এদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৪৯০ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, যার মধ্যে ঢাকায় ৩৪৭ জন এবং চট্টগ্রামে ৫৯ জন।

চট্টগ্রামের মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৪৯, এবং মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ জনে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, মহানগরীর কোতোয়ালি, বাকলিয়া, বায়েজিদ, বন্দর, পাহাড়তলি, খুলশি ও চকবাজার এলাকাগুলো রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।

রেড জোন চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে এলাকাগুলোতে মশা নিধন কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচলাইশ, হালিশহর, পতেঙ্গা, চান্দগাঁও এবং ডবলমুরিং এলাকাকে হলুদ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম।

সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, আগস্টের শেষ থেকে চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে মশাবাহিত এই রোগের বিস্তার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায় এবং এ মাসে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রামে গত সেপ্টেম্বর মাসে ৫১৫ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়, যার অধিকাংশই রেড জোন ঘোষিত এলাকাগুলো থেকে।

কীটতত্ত্ববিদরা সতর্ক করেছেন যে, ডেঙ্গু এখন মৌসুমি রোগ নয় বরং এটি সারা বছর ধরে বিস্তৃত হতে পারে। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে নগরবাসীকে আরও সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশন মশা নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করছে, যাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব হয়।

এদিকে, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সিটি করপোরেশন বেশ কয়েকটি এলাকায় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। এর ফলে চলতি অক্টোবরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আগস্ট থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরে ১১ জন মারা গেছে। রোগী বেড়ে যাওয়ায় ২০ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১০টি ওয়ার্ডে ২২০টি বাড়িতে সার্ভে করি। এসময় মশার ডিম ও লার্ভা পরীক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। যেসব এলাকায় বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে, সেগুলোকে রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সেই তালিকা সিটি করপোরেশনে দিয়ে এলাকাগুলোতে মশা নিধনে বিশেষ নজর দিতে বলেছি। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনে বেশ কয়েকটি এলাকায় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। ক্র্যাশ প্রোগ্রাম ফলে চলতি অক্টোবের এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যু হয়নি।”

ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “চট্টগ্রামে আগস্টের শেষ থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। অল্প বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়। চলতি সেপ্টেম্বরেও থেমে থেমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে, এজন্য মশাবাহিত এ রোগের বিস্তার ঘটেছে। ডেঙ্গু এখন মৌসুমি রোগ নয়, এর প্রকোপ সারা বছর। এজন্য জনসচেতনতা সহ চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে করণীয় মানতে হবে।”

বিএইচ