বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৩ রানের লক্ষ্যে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ১৬৪ রানে। মাত্র ৬৪ রানে ইংল্যান্ডের শেষ ৯ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ১০৮ রানে। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৬ উইকেট, ম্যাচে মিরাজ নিয়েছেন ১২ উইকেট।
২৭৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডকে ভালো সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার অ্যালিস্টার কুক ও বেন ডাকেট। ডাকেট তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে চার মেরে তিনি ফিফটি স্পর্শ করেন ৬১ বলে। পরের বলে মারেন আরেকটি চার, তাতে শতরান পূর্ণ হয় ইংল্যান্ডের। সফরকারীরা চা বিরতিতে যায় ২৩ ওভারে বিনা উইকেটে ১০০ রানে।
তবে চা বিরতি থেকে ফিরেই ইংলিশ শিবিরে জোড়া আঘাত হানে বাংলাদেশ। বিরতির পর প্রথম বলেই বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মিরাজ। তরুণ অফস্পিনারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ফিফটি করা বেন ডাকেট (৬৪ বলে ৫৬)। পরের ওভারে সাকিব আল হাসানও প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা জো রুটকে। ১ রান করা রুট হয়েছেন এলবিডব্লিউ।
মিরাজের পরের ওভারে ফিরতে পারতেন কুকও। সুইপ করতে গিয়ে বল আঘাত হেনেছিল তার প্যাডে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জোরালো আবেদনে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা আঙুলও তুলেছিলেন। ইংলিশ অধিনায়ক নেন রিভিউ। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্প মিস করেছে! বেঁচে যান কুক। তার রান তখন ৪৪।
অবশ্য খানিক বাদেই জোড়া আঘাত হানেন মিরাজ। একই ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন গ্যারি ব্যালান্স ও মঈন আলীকে। মিরাজের দ্বিতীয় বলে শট খেলতে গিয়ে মিডঅফে তামিম ইকবালের ক্যাচে পরিণত হন ব্যালান্স (১৪ বলে ৫)। শেষ বলে এলবিডব্লিউ মঈন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি, ডাক।
নিজের পরের ওভারে কুককেও ফিরিয়ে দেন মিরাজ। এবার ক্যাচ। সিলি পয়েন্টে দারুণ ক্যাচ নেন মুমিনুল হক। ইংলিশ অধিনায়ক করেন ৫৯ রান। বিনা উইকেটে ১০০ থেকে ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১২৭!
এক ওভার পর এসে জনি বেয়ারস্টোকেও ফিরিয়ে দেন মিরাজ। তাতে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টে তৃতীয়বার ইনিংসে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেয়ে যান এই অফস্পিনার। স্লিপে শুভাগত হোমকে ক্যাচ দেন বেয়ারস্টো (৮ বলে ৩)। ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৬ উইকেটে ১৩৯।
মূল নাটকের মঞ্চায়ন যে তখনো বাকি, সেটি বোঝা গেল সাকিবের করা ইনিংসের ৪৩তম ওভারে। একই ওভারে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশেকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে বেন স্টোকস ও আদিল রশিদকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিকটা না হলেও শেষ বলে তুলে নেন জাফর আনসারির উইকেট।
দুই ওভার পরেই আসে ঐতিহাসিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মিরাজের বল আঘাত হানে স্টিভেন ফিনের প্যাডে। জোরালো আবেদন করেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা। আঙুল তোলেন আম্পায়ার ধর্মসেনা। সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক জয়ের উৎসবে মাতেন সাকিব-মুশফিক-মিরাজরা। শুধু কি তারাই? গোটা বাংলাদেশও!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৬৩.৫ ওভারে ২২০ (তামিম ১০৪, মুমিনুল ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সাকিব ১০; মঈন ৫/৫৭, ওকস ৩/৩০, স্টোকস ২/১৩ )।
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ৮১.৩ ওভারে ২৪৪ (রুট ৫৬, ওকস ৪৬, রশিদ ৪৪*; মিরাজ ৬/৮২, তাইজুল ৩/৬৫, সাকিব ১/৪১)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৬৬.৫ ওভারে ২৯৬ (ইমরুল ৭৮, মাহমুদউল্লাহ ৪৭, সাকিব ৪১, তামিম ৪০, শুভাগত ২৫*; রশিদ ৪/৫২, স্টোকস ৩/৫২, আনসারি ২/৭৬, মঈন ১/৬০)।
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৭৩) ৪৫.৩ ওভারে ১৬৪ (কুক ৫৯, ডাকেট ৫৬, স্টোকস ২৫; মিরাজ ৬/৭৭, সাকিব ৪/৪৯)।
ফল: বাংলাদেশ: ১০৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতা।