বাকৃবির গবেষণা

আমের বীজের নির্যাস ব্যাকটেরিয়ার কোষের গঠন ধ্বংস করতে সক্ষম

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৪-১০-২৮ ১৭:১৫:৫৭


বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে আম উৎপন্ন হয় এবং এর বীজ সাধারণত পরিত্যক্ত হয়। এই পরিত্যক্ত আমের বীজ বা আমের আটিঁর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে প্রাথমিক সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষকদল দেশি জাতের আমের বীজের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করে এ সফলতা পেয়েছে। আমের আটিঁর গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বাকৃবির মাইক্রোবায়োজলি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন ও তাঁর গবেষক দল এ সাফল্য পেয়েছেন।

আমের আটিঁর বীজের নির্যাস থেকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান মানবদেহ ও পশু-পাখিতে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই গবেষক। আমের আটিঁ থেকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান তৈরির বিষয়ে গবেষক ড. গোলজার হোসেন বলেন, আমরা রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আমের পরিত্যক্ত বীজ থেকে একটি নির্যাস তৈরি করি, যা কিছু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ইঁদুরে সেই নির্যাস পরীক্ষার সময় দেখা গেছে যে, এই নির্যাসের বিষাক্ততা নেই বললেই চলে এবং উচ্চ মাত্রায় এই নির্যাস প্রয়োগে ইঁদুরগুলির লিভার ও কিডনিতে সামান্য পরিবর্তন দেখা গেলেও, উল্লেখযোগ্য কোনো খারাপ লক্ষণ দেখা যায়নি।

গবেষকের নিজস্ব অর্থায়নে গবেষণাটি শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে গৃহীত হয়েছে বলে জানান গবেষক দলের প্রধান ড. গোলজার হোসেন। গবেষক দলে আরও ছিলেন মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা, ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমিন আক্তার, কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিপ্লব কুমার সাহা, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রাহীলা জান্নাত সাদিয়া, চন্দন সিকদার, আনন্দ মজুমদার, মোসলেমা জাহান মৌ এবং নাজমুল হাসান সিয়াম।

স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে পর্যবেক্ষণ করে গবেষকদল দেখেছেন আমের বীজের নির্যাস ব্যাকটেরিয়ার কোষের গঠন ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরী বায়োফিল্মও ধ্বংস করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত ইঁদুরের উপর এই নির্যাস প্রয়োগে ওই সংক্রমিত ইঁদুরগুলো দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।

আমের আটিঁর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান প্রয়োগের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে গবেষক জানান, বর্তমানে আমরা পোল্ট্রিতে এই নির্যাস প্রয়োগের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি। যদি সফল হই, এটি বাংলাদেশের পোল্ট্রি সেক্টর ও স্বাস্থ্যখাতে দৃশ্যমান অবদান রাখবে এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয় সাধিত হবে, যা জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক হবে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নিয়ে প্রধান গবেষক ড. গোলজার জানান, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সারাবিশ্বে একটি বৈশ্বিক হুমকি। মানুষের পাশাপাশি প্রাণীর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকই প্রধান ভরসা। তবে, অনেক ব্যাকটেরিয়া বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত সিন্থেটিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্টের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( ডব্লিউএইচও) এএমআরকে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভেষজ ঔষধগুলি সিন্থেটিক ওষুধের বিকল্প হিসেবে নিরাপদ, সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী। ডব্লিউএইচও ভেষজ পরিত্যক্ত পদার্থ নিয়ে গবেষণার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আম উৎপাদনে বিশ্বে অন্যতম। আমে বিভিন্ন ধরনের ম্যাক্রো ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে। আমের খোসা ও বীজের কার্নেল ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন হলেও সাধারণত এই অংশগুলি পরিত্যক্ত হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। ইতোপূর্বে আমের খোসা ও পাতার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা নিয়ে কিছু গবেষণা হয়েছে, তবে আমের বীজের (আটিঁ) কার্যকারিতা নিয়ে বাংলাদেশে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা পাওয়া যায়নি।

যদিও কয়েকটি দেশে এ বিষয় নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা হয়েছে। গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা বলেন, যেসব ব্যাকটেরিয়া গ্রাম নেগেটিভ সেসব ব্যাকটেরিয়ার উপর এর কার্যকরীতা তেমন নেই। এর অর্থ এই ক্রুড নির্যাসটির এর মধ্যে এমন কোনো কিছু আছে যা কিনা এই ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করেছে। এখন আমাদের অধ্যাপক গোলজারের টিমের যেটি মেইন কাজ, তারা এই সক্রিয় উপাদানটি বের করার চেষ্টা করবে। যে সক্রিয় উপাদানটি ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করেছে, সেটি যদি বের করা যায়, তবে আমি বলতে পারি যে বর্তমানে এটির যে বিষাক্ততা আছে সেটির ৯৯.৯৯ ভাগ চলে যাবে।

এম জি