ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। এদিকে ওই ঘটনার পর প্রত্যাহার করা হয়েছে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে। আজ বুধবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে নাসিরনগর গৌরমন্দিরে এক সমাবেশে সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, নাসিরনগরে যা ঘটেছে, সেটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা পরিকল্পিত ঘটনা।
এখানকার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এই এলাকায় ৪৪ হাজার হিন্দু ভোটার রয়েছে। তারা যাদের ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি করেছেন, তারা আজ কোথায়? সেই জনপ্রতিনিধিদের কোন খোঁজ নেই কেন? এরপর তিনি (জনপ্রতিনিধি) যদি এখানে আসেন, আপনারা কালো পতাকা প্রদর্শন করবেন।
এ ঘটনা তদন্তে আমরা সুপ্রিম কোটের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি দাবি করছি। এ সময় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, জয়ন্ত সেন, জে এল ভৌমিকসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল। এদিকে ঘটনার পর নাসিরনগর থানার ওসি আবদুল কাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল করিম জানান, নাসিরনগর থানার ওসিকে প্রশাসনিক কারণে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও
মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। সাংবাদিকদের সুলতানা কামাল বলেন, এখানে কারা সমাবেশ করেছে, কারা অনুমতি দিয়েছে, সেগুলো সবার জানা। তাহলে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এখানে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কাজেই তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে তাতে সত্য উঠে আসবে না। এ কারণে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা নিরপেক্ষ নাগরিকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত।
একইদিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি। তারা ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। এনামুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, একাত্তরে যেভাবে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গেও তার মিল রয়েছে। এখানে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কেন, কী কারণে এখানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো।