ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে আরএফসিডি সুদহার

আপডেট: ২০২৪-১০-৩১ ১৯:৫১:৪৫


রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর বেধে দেওয়া সুদহারের সীমা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এই আমানতের সুদহার নির্ধারণ করা যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতোদিন সোফর রেটের সাথে সর্বোচ্চ দেড় শতাংশ যুক্ত করে (৫.১৪+১.৫) গ্রাহকদের সুদের হার নির্ধারণ হতো। কিন্তু এখন আর সেই সীমা থাকলো না। এই উদ্যোগের ফলে ব্যাংকে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। কেননা বিদেশফেতর যে কেউ এখন ব্যাংকে ডলার রাখলে আগের তুলনায় বেশি মুনাফা দাবি করতে পারবে। ফলে ঘরে ফেলে রাখা ডলার ব্যাংকে ফিরে আসবে।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হায়।

এতে বলা হয়, রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের বিপরিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত সুদহারের সীমা আর থাকবে না। এখন থেকে সুদহার নির্ধারণ হবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে মানুষের ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। এরপরই দি সিটিসহ কিছু ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই হিসাব খুলতে শুরু করে।

বর্তমানে নগদ ডলারের বড় অংশ মজুত আছে ইস্টার্ণ, দি সিটি, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, পূবালী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে। মার্কিন ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড, ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলারেও আরএফসিডি হিসাব খোলা যায়।

কাদের জন্য আরএফসিডি হিসাব

বিদেশ থেকে এসেছেন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে এমন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক ব্যাংকে গিয়ে আরএফসিডি হিসাব খুলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কবে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, এটা মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো, বিদেশ গেছেন তার প্রমাণপত্র অর্থাৎ পাসপোর্ট ও ভিসার নথিপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হবে। হিসাব খোলার জন্য আরও প্রয়োজন দুই কপি ছবি, নমিনি, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)। এই হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কোনো চেক বই না দিয়ে ডেবিট কার্ড দেয়, যা থেকে খরচে কোনো অনুমোদন লাগে না।

কত ডলার জমা রাখা যাবে

একজন নাগরিক প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের জন্য ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত আরএফসিডি হিসাবে জমা রাখতে পারবেন। ফলে গত এক বছরে যদি কেউ ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করে থাকেন, তিনি চাইলে তাঁর হিসাবে কোনো নথিপত্র ছাড়াই এক লাখ ডলার জমা দিতে পারবেন। তবে প্রতিবার ভ্রমণের ক্ষেত্রে এর বেশি পরিমাণ ডলার জমা দিতে চাইলে তাঁকে বেশি ডলার দেশে আনার জন্য কাস্টমসের ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এখন এই হিসাবের বিপরীতে ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, এই হিসাবে জমা অর্থের ওপর ব্যাংকগুলো বেঞ্চমার্ক রেটের সঙ্গে আরও অন্তত দেড় শতাংশ সুদ দেবে। সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) এখন ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। সে অনুযায়ী আরএফসিডি হিসাবে সুদহার দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।

যেসব সুবিধা মিলছে

বর্তমানে দেশের প্রত্যেক নাগরিক এক বছরে বিদেশে গিয়ে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারেন। যাঁরা দেশে বসে ই-কমার্সে কেনাকাটা করেন তাঁরা একবারে ৩০০ ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য কিনতে পারেন না। তবে আরএফসিডি হিসাবের বিপরীতে নেওয়া কার্ড দিয়ে বিদেশে গিয়ে খরচের কোনো সীমা নেই। হিসাবের পুরো অর্থই খরচ করা যায়। পাশাপাশি এই কার্ড দিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খরচের জন্য বিভিন্ন ধরনের অনুমোদনেরও প্রয়োজন পড়ে না। প্রতিবার ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে নগদ ৫ হাজার ডলার নেওয়া যায়।

এ ধরনের গ্রাহকেরা চাইলে দেশে বসেই বা বিদেশ গিয়ে যেকোনো মূল্যের পণ্য কিনতে পারছেন। ব্যাংকগুলোকে হিসাবের বিপরীতে প্রতিটি কার্ডের সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি কার্ড দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সন্তান বা ভাই-বোনসহ গ্রাহকের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিও সেই কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। আবার তাঁদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত খরচও এসব কার্ড দিয়ে পরিশোধ করা যাবে। এতে গ্রাহক সহজেই পরিবারের সদস্যদের খরচের ধরন জানতে পারছেন। কারণ, প্রতিটি লেনদেনের পর গ্রাহক খুদে বার্তা পান।

এএ