ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে দিয়েছেন বিজয় ভাষণ। যেখানে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। একথা তার অন্যতম নীতিগত সিদ্ধান্তেরও ইঙ্গিত।
ভাষণে বিশ্বের কোথায় কোথায় যুদ্ধ থামাতে সচেষ্টা হবেন, তা স্পষ্ট করে না বললেও – ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধ প্রসঙ্গে হয়তো তিনি একথা বলেছেন। তবে আশঙ্কার কারণ রয়েছে ইউক্রেনের জন্য।
বিজয় ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমি যুদ্ধ শুরু করব না, আমি যুদ্ধ থামাব। এসময় তার প্রথম মেয়াদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, "আমাদের কোনো যুদ্ধ ছিল না, চার বছর আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াইনি। কেবল আইএসআইএসকে পরাজিত করেছি।
২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈরী সম্পর্ক থাকা উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পর্কোন্নয়নেরও চেষ্টা চালান। তিনিই ছিলেন প্রথম ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি উ. কোরীয় নেতা কিম জন উনের সাথে সিঙ্গাপুরে ঐতিহাসিক এক বৈঠক করেন ও তার সাথে করমর্দন করেন।
আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উদগ্রীব ছিল ইউক্রেনও। নির্বাচনের ফল জানানো শুরু হতেই উৎকণ্ঠার সাথে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন ইউক্রেনীয়রা। ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছেন এটা জানার পরে ইউক্রেনীয়দের অনেকে আশঙ্কা করছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের জন্য দেশটিতে পাঠানো গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা বন্ধ করে দেবেন তিনি।
ইউক্রেনের রণাঙ্গনে এগোচ্ছে রুশ বাহিনী, অন্যদিকে কোণঠাসা হয়ে লড়তে হচ্ছে ইউক্রেনীয়দের। জনবল ও অস্ত্রের সংখ্যা – দুদিক দিয়েই বিপর্যয়ের দোরগোড়ায় কিয়েভ।
এদিকে মস্কোর সাথে উত্তর কোরিয়ার জোট আরও দৃঢ়তা লাভ করেছে, ওয়াশিংটন ও সিওল জানিয়েছে, হাজার হাজার উ. কোরীয় সেনাকে যুদ্ধে যোগ দিতে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে।
ইউক্রেনকে বিপুল অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিতে দিতে ক্লান্ত ইউরোপীয় মিত্ররাও। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সমর্থন সেখানে উদ্দীপনার ভূমিকা রেখেছে এতদিন। এখন ট্রাম্পের আগমনে এসব মিত্রদেশ হাল ছেড়ে দিবে এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। কারণ, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সহায়তার কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত ওলেগ শামশুর বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছিলেন, "ট্রাম্পের বিজয়ী হলে তা (ইউক্রেনের জন্য) ঝুঁকি তৈরি করবে। পরিস্থিতি হবে খুবই উদ্বেগজনক।"
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের কারণে ন্যাটো সামরিক জোটের প্রায় সদস্যের কোনো না কোনো সাহায্য ইউক্রেন পেয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ও অস্ত্র তারা দিয়েছে কিয়েভকে। তবে ইউরোপের এ সহায়তা এখন কমছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন সহায়তাও গত দু-তিন মাস তেমন জোরালো ছিল না।
এদিকে নির্বাচিত হওয়ার আগে ট্রাম্প বলেছিলে, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ থামাবেন। এই মন্তব্যের পরে তার সম্পর্কে ইউক্রেনের ভীতি আরও বেড়েছে।
এএ