আস্তে আস্তে জয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সমস্ত নির্বাচনী জরিপ, বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা আর প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন সত্ত্বেও, এই রিপাবলিকান প্রার্থীকেই যেন বেছে নিতে যাচ্ছেন মার্কিনিরা।
সর্বশেষ প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী ২৪৪টি ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে ট্রাম্পের হাতে। বিপরীতে হিলারির হাতে রয়েছে ২১৫ ইটি ইলেক্টরাল ভোট। গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডা, ওহাইয়ো এবং নর্থ ক্যারোলিনাতে হেরে যাওয়ার পর হিলারি শিবিরে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। হিলারি প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন ব্যক্ত করা প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, বিপাকে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। পরে বলা হয়, জয়ের কাছাকাছি রয়েছেন ট্রাম্প।
এবার সবার চোখ পেনসিলভ্যানিয়া (২০ ইলেক্টরাল ভোট), মিশিগান (১৬ ইলেক্টরাল ভোট) আর উইসকনসিনে (১০ ইলেক্টরাল ভোট)। গার্ডিয়ান এপির সরবরাহকৃত ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলছে, এই গুরুত্বপূর্ণ তিন দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের তিনটিতেই জিততে হবে হিলারিকে। নইলে ঘটে যেতে পারে ‘ট্রাম্প মিরাকল’। অবশ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী উইসকনসিনে হারার পরও ট্রাম্পের সঙ্গে ২৬৯-২৬৯ ইলেক্টরাল ভোট হতে পারে। প্রেসিডেন্ট হতে সেক্ষেত্রে হিলারিকে অবশ্যই নিউ হ্যাম্পশায়ারে জিততে হবে।
এর মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে ফুরিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ইতিহাস রচনার সম্ভাবনা। যারা ইতিহাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট-এর স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, তাদের স্বপ্নভঙ্গ ঘটিয়ে জয় ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন নির্বাচনে অর্থের ভূমিকা খুবই বড়। সেখানকার নির্বাচনে বড় ধরনের ভূমিকা থাকে মিডিয়ারও। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলেছিল, যে এবারের নির্বাচনে অর্থের চেয়ে প্রযুক্তির ভূমিকা বড়।
ট্রাম্পের উত্থানের পর প্রযুক্তির ভূমিকার কথা আবারও আসছে আলোচনায়। আলোচনায় আসছে সাড়া জাগানো বিকল্প সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস। অনেকেই মনে করছেন, হিলারি সংক্রান্ত নথি ফাঁসের মধ্য দিয়ে উইকিলিকস-ই কি তবে হিলারির হারে মুখ্য ভূমিকা পালন করলো?
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। কোন প্রার্থী কত বেশি ভোট পেলেন তার চেয়ে জরুরি হলো কে কতটা ইলেক্টোরাল ভোট পেলেন তা। ৫৩৮ জন ইলেক্টরের সমন্বয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ গঠিত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীকে এর মধ্যে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়। এক এক স্টেটে ইলেক্টরের সংখ্যা এক এক রকম। নির্বাচনের দিন মার্কিনিরা যখন ভোট দেন তখন তারা মূলত প্রার্থীদের ইলেক্টরদেরকে বাছাই করেন। দুটি ছাড়া বাকি ৪৮টি অঙ্গরাজ্যে ‘উইনার-টেক-অল’ সিস্টেম চালু রয়েছে। এর আওতায় জয়ী প্রার্থীকে ওই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেক্টর দিয়ে দেওয়া হয়। তবে নেবরাস্কা ও মেইন অঙ্গরাজ্য দুটি এক্ষেত্রে আলাদা। এ দুটি অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের পাওয়া ভোটের সংখ্যানুপাতে ইলেক্টোরাল ভোট ভাগ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে এবং পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ঐতিহাসিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণ। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও ওভারসিজ ভোটারদের আগাম ভোট এবং ১শ ভোটারের কম জনসংখ্যার ৩টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সব অঙ্গরাজ্যে এ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ১০০ আসনবিশিষ্ট সিনেট ও ৪৩৫ আসনবিশিষ্ট হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভেরও ভোটগ্রহণ হয়েছে। হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভে রিপাবলিকানরা আবারও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস