ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি কার্যকর, ফিরছেন উদ্বাস্তুরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০২৪-১১-২৮ ০৮:১৭:৫৮


ভয়াবহ যুদ্ধের পর ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় লেবাননে মানুষের মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি। বাস্তুচ্যুত অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন নিজ নিজ বাড়িতে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার ঘোষণা দেন, উভয়পক্ষই এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিয়েছে। এরপর স্থানীয় সময় বুধবার ভোর থেকে দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।

তবে লেবানন থেকে তাৎক্ষণিক সেনা প্রত্যাহার করবে না ইসরায়েল। চুক্তি অনুসারে, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তাদের অবশ্যই লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে লেবানন সীমান্তে ১৪ মাস ধরে চলা লড়াই অবসানের একটি পথ তৈরি হলো। এ লড়াইয়ে ৩ হাজার ৮২৩ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৮৫৯ জন আহত হয়েছেন। এর সূচনা হয়েছিল গত বছরের গাজা যুদ্ধের পরপরই। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।

লেবানন আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে অনেক প্রাণহানির পাশাপাশি দুই দেশের লাখ লাখ মানুষ ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির খবরে দক্ষিণ লেবাননে ফিরতে শুরু করেছেন হাজারো মানুষ। এ কারণে বৈরুত থেকে দক্ষিণ লেবাননের প্রধান সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। রাস্তার পাশে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে পানির বোতল বিতরণ করছেন। অনেকে হিজবুল্লাহর পতাকা নেড়ে উদযাপন করেন।

পানির বোতল বিতরণ করা একজন বিবিসিকে বলেন, হাজার হাজার বাসিন্দার নিজ বাড়িতে ফিরে আসা প্রমাণ করে আমরা এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি। আমাদের একমাত্র ক্ষতি হিজবুল্লাহর সাবেক নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যু। লেবানন সংসদের স্পিকার নাবিহ বেরি ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুতদের নিজ বাড়িতে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি বাহিনী আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে সরে যাবে এবং এই সময়ের মাঝে হিজবুল্লাহর পরিবর্তে লেবাননের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। তবে এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ লেবাননে হাজার হাজার লেবানিজ সেনা মোতায়েন করা হবে।

তাদের কীভাবে মোতায়েন করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সামরিক বাহিনীর অভিযোগ, তাদের এ দায়বদ্ধতা পূরণের জন্য সম্পদ, অর্থ, জনবল এবং সরঞ্জাম নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ‘পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার’ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দক্ষিণে এবং হিজবুল্লাহ উত্তরে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লেবাননের সামরিক বাহিনী ব্লু লাইনের চারপাশের এলাকায় টহল দেবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স বিদ্যমান ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় যোগ দেবে। এ ব্যবস্থায় বর্তমানে লেবাননের সেনা, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এবং লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউনিফিল) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের সম্ভাব্য সব অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। লেবাননের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা থাকবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ফরাসি বাহিনী প্রশিক্ষণ এবং যোগাযোগের মাধ্যমে লেবাননের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করবে।

আলজাজিরা জানায়, চলমান পরিস্থিতিতে লেবাননে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নাজিব মিকাতি। তিনি সময়টিকে ‘লেবাননের ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম’ বলে বর্ণনা করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতিকে ‘মৌলিক পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ চুক্তি গাজার মানুষের মধ্যে আশার আলো নিয়ে এসেছে।

এনজে