দীর্ঘ ১২ বছর পর টনি ব্লেয়ার স্বীকার করলেন ‘ইরাক যুদ্ধ ভুল ছিল।’ ভুল যুদ্ধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। সেই সঙ্গে এ-ও স্বীকার করেছেন, ইরাক যুদ্ধের ভুলের কারণেই জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জন্ম হয়েছে।
একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে শনিবার টনি ব্লেয়ার বলেন, ‘ইরাকে আইএসের উত্থানের জন্য আংশিকভাবে আমিও দায়ী।’ ইরাককে নরকে পরিণত করার জন্য টনি ব্লেয়ার ও জর্জ বুশের ভুল সিদ্ধান্ত দায়ী- এমন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এসব কথা বলেন।
ডেইলি মেইল অনলাইনের এক খবরে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কথোপকথনের সময় ব্লেয়ার বলেন, ইরাক যুদ্ধ ‘যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে’ পড়ে। তবে এ জন্য তিনি দায়ী নন।
সিএনএনে একটি সাক্ষাৎকারে খোলামেলাভাবে ব্লেয়ারকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘ইরাক যুদ্ধ কি ভুল ছিল?’ সাক্ষাৎকারটি আজ রোববার প্রচারিত হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রশ্নের উত্তরে ব্লেয়ার বলেন, ‘এই ঘটনার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি, যেসব গোয়েন্দা তথ্য আমরা পেয়েছিলাম, তা ভুল ছিল। আরো দুঃখ প্রকাশ করছি, আমাদের পরিকল্পনায় কিছু ভুল ছিল। আমাদের বুঝতে ভুল হয়েছিল, ইরাকি শাসনের পতন হলে কী পরিণতি হতে পারে- সে বিষয়ে।’
‘আইএসের উত্থানের পেছনে ইরাক যুদ্ধই মূল কারণ’- এমন প্রসঙ্গে ব্লেয়ার বলেন, ‘আমি মনে করি, এর মধ্যে সত্যের উপাদান তো আছেই।’
‘আমরা যারা ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলাম, আপনি বলতে পারেন না, ২০১৫ সালের ইরাকের জন্য তাদের কোনো দায় নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্রডকাস্টার শনিবার টিভি ট্রায়ালে ব্লেয়ারকে ইরাক যুদ্ধে বুশের ক্রীড়নক হওয়ার জন্য সরাসরি অভিযুক্ত করেন। আর সেই অভিযোগের পক্ষেই কথা বলেন তিনি। এর মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে দ্য মেইল হোয়াইট হাউসের একটি নথির প্রমাণ দিয়ে খবর প্রকাশ করে, ইরাক যুদ্ধের এক বছর আগে ২০০২ সালে বুশ ও ব্লেয়ার ইরাকে আগ্রাসন চালিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরিকল্পনা করেন।
২০০২ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল প্রেসিডেন্ট বুশকে ব্লেয়ারের সম্পর্কে একটি নোট দেখান। যেখানে বলা হয়, ইরাক যুদ্ধ সমর্থন করবে যুক্তরাজ্য। প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইলের তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় সাংবাদিকরা কলিন পাওয়েলের একটি নোট পেয়ে যান। ২০০২ সালের মার্চ মাসে টেক্সাসে বুশের সঙ্গে ব্লেয়ারের বৈঠকের এক সপ্তাহ আগে এটি লেখা হয়।
তবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা ইরাক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। সাদ্দামের পতনের পর কে নেবে ইরাকের দায়িত্ব, তা নিয়েই ছিল মূল সমস্যা। কিন্তু সেই সমস্যার সমাধান না করেই ইরাকে হামলা শুরু করে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী। যার খেসারত আজো দিতে হচ্ছে ইরাককে। এখন দেশটিতে জঙ্গি রাজত্ব চলছে। আর এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন টনি ব্লেয়ার।
টনি ব্লেয়ার তার ভুল বুঝতে পারলেও বুশ এ বিষয়ে কোনো কথা বলতেই রাজি নন। তবে যেহেতু ব্লেয়ার তার দায় নিয়েছেন, একদিন বুশকেও তা নিতে হবে। তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল।