দিন দিন মিয়ানমারে চরম নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গারা। প্রকাশ্যে কুপিয়ে বা জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে দেশটিতে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। রাখাইন প্রদেশে গত রবিবার অন্তত ৯ জন রোহিঙ্গাকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। সম্প্রতি তা প্রকাশ পাওয়ায় সমালোচনা এখন তুঙ্গে। শুধু মংড়ুর একটি গ্রামে এখন পর্যন্ত ৯০ জন নারী-পুরুষ-শিশু নিখোঁজ রয়েছে। খবর বিবিসির। খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান সমর্থিত ‘রোহিঙ্গা ভিশন’ নামে একটি ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক ভিডিও চিত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আগুনে পোড়া কয়েকটি মরদেহ এবং এগুলোকে ঘিরে তাদের স্বজনরা আর্তনাদ করছে।
এদিকে রাখাইন রাজ্যের কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালাতে মুসলিম বিরোধী একটি মিলিশিয়া গ্রুপকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করছে এমন খবর প্রচারের পর প্রাণভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। শুক্রবার নাফ নদী পার হয়ে অবৈধভাবে কক্সবাজারের টেকনাফে প্রবেশের চেষ্টাকালে ১২৫ রোহিঙ্গাকে আটকের পর মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদস্যরা।
আর জাতিসংঘ বর্তমান মানবিক পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে, রাখাইন রাজ্যে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দিতে বলেছে। অন্যদিকে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনলাইনে এক আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন হাজার হাজার মানুষ। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে কোনো অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে এক পুলিশ চেকপোস্টে অতর্কিত হামলায় ৯ পুলিশ নিহতের পর বিদেশি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে অভিযোগ তুলে রাখাইন প্রদেশে ব্যাপকভিত্তিক সেনা অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নির্বিচারে হত্যা, মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। তবে সেনাবাহিনী বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
টানা অভিযোগের এক পর্যায়ে তারা সম্প্রতি শুধু ৬৯ জন রোহিঙ্গা (তাদের ভাষায় বাঙালি) এবং ‘সহিংস হামলাকারী’কে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে মৃতের সংখ্যা ১৩০ ছাড়িয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর রাখাইন প্রদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রবেশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলে ওই এলাকার প্রকৃত অবস্থা জানা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।