বেশ কিছুদিন ধরেই তারল্য সংকটে ভুগছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকগুলো তাদের তারল্য সংকট দূর করতে এখন আমানত সংগ্রহকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক তাদের তারল্য সংকট দূর করতে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। আমানত সংগ্রহের এই অভিযানে তারা বেশ সাড়াও পাচ্ছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানত বেড়েছে দশমিক ৭৩ শতাংশ। কিন্তু আমানত সংগ্রহের এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। এমনকি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের মোট স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে ব্যাংক খাতে আমানত কমেছে ১৩ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা বা দশমিক ৭৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৬২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে ৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা বা দশমিক ৩৩ শতাংশ।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সরকারি ব্যাংকগুলো সেভাবে সুদ সমন্বয় করেনি। যার ফলে তারা আমানত সংগ্রহের দৌড়ে পিছিয়ে আছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে অনেকেই সংসারের খরচ মেটাতে ব্যাংক থেকে তাদের আমানত তুলে নিচ্ছে। এছাড়া আস্থার সংকট থেকে অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। যার ফলে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত আকৃষ্ট করলেও সেইভাবে কাজ করছে। ফলে তাদেরও আমানত কমেছে।
অপরদিকে, চলতি বছরের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক -সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএলের আমানতের স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ১১ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
তথ্যানুযায়ী, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমানত বেশি কমেছে শরীয়াহ ভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলোর। ২০২৪ সালের জুন শেষে শরীয়াহ ভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। আর একই বছরের সেপ্টেম্বর শেষে শরীয়াহ ভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ১০ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
তবে আমানত বেড়েছে বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি ছিল ৮০ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৪১ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি ছিল ৫০ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বর শেষে বিশেষায়িত ব্যাংকের আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে আমানত বেড়েছে ২১৮ কোটি টাকা বা দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এএ