দ. কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০২৪-১২-১৪ ২১:২৩:৩৩
সংসদে আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটিতে অভিশংসিত হওয়া ইউন সুক-ইওলকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শনিবার (১৪ ) দক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটে তাকে বরখাস্ত করার তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
অভিশংসিত হলেও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন ইউন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না তার।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক আইন জারি করার স্বল্পকালীন প্রচেষ্টার ঘটনায় শনিবার অভিশংসিত হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। অভিশংসনের পর প্রেসিডেন্টের পদ থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে তার দায়িত্ব ও ক্ষমতা থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সাংবিধানিক আদালত তার ভাগ্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবেন তিনি।
দেশটির সংবিধান, আইন ও প্রটোকল অনুযায়ী, ইউন সুক-ইওল কিছু ক্ষমতা হারালেও তার কিছু ক্ষমতা অব্যাহত থাকবে। বরখাস্তের পর ইউনের প্রধান সাংবিধানিক ক্ষমতা ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক-সুর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর, কূটনীতিক নিয়োগ এবং পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষমতা। এছাড়াও দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ বিষয়ক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে গণভোটে দেওয়ার অধিকার থাকবে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের।
ফলে সামরিক আইন ঘোষণা ও বিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার একক ক্ষমতা হারাবেন ইউন। পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব ও ফৌজদারী অপরাধের বিচার থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ হারাবেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সাংবিধানিক আদালতের তিনটি শূন্যপদসহ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষমতাও স্থগিত করা হয়েছে তার।
সামরিক আইন জারি ঘিরে গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে প্রথম অভিশংসনের প্রচেষ্টা চালান বিরোধীরা। তবে সামান্য ভোটের ব্যবধানে সেই দফায় বেঁচে যান তিনি। ওই সময় তার রাজনৈতিক দল ভোট বয়কট করায় অভিশংসনের পক্ষে সংসদে বিরোধীদের কোরাম করা সম্ভব হয়নি।
রয়টার্স বলছে, ইউনের পিপল পাওয়ার পার্টির অন্তত ১২ জন আইনপ্রণেতা বিরোধী শিবিরে যোগ দেওয়ার পর শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে অভিশংসন প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ৩০০ আসনের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের ১৯২ আসনে নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়। যা অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের পথ পরিষ্কার করে।
শনিবার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন মোট ২০৪ জন আইনপ্রণেতা। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৮৫ জন। এছাড়া তিনজন আইনপ্রণেতা সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন এবং আটটি ভোটকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সংসদে অভিশংসনের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতা সমর্থন জানানোয় এখন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের ভাগ্য নির্ধারণ হবে দক্ষিণের সাংবিধানিক আদালতে। দেশটির এই আদালত আগামী ছয় মাসের মধ্যে ইউনকে অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ইউনকে সরানোর জন্য সাংবিধানিক আদালতের ৯ সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিলের অন্তত ছয়জনকে অভিসংশন প্রস্তাবের পক্ষে মত দিতে হবে। যদিও শনিবার আদালতের এই কাউন্সিলের ইউনের রাজনৈতিক দল পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) সমর্থক পাঁচ বিচারক পদত্যাগ করেছেন।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ বলেছে, পদত্যাগ করা সুপ্রিম কাউন্সিলের দুই সদস্য কিম মিন-জিওন ও ইন ইয়ো-হান অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউনের সমর্থক ছিলেন। এছাড়া অন্য দুই বিচারক জ্যাং ডং-হাইওক ও যুব সুপ্রিম কাউন্সিল সদস্য জিন জং-ও পিপিপি নেতা হ্যানের সমর্থক ছিলেন। কাউন্সিলের অপর সদস্য কিম জে-ওনও পদত্যাগ করেছেন।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।
বিএইচ