এই সময়ে যারা শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ পরতে পছন্দ করেন,
তারা শীত পোশাক হিসেবে অবশ্যই শাল বা চাদর রাখেন। কারণ শাল প্রথমত শীতের হাত থেকে রক্ষা করে, দ্বিতীয়ত এসব পোশাকের সঙ্গে তা মানানসই হয়। অবশ্য মেয়েরা শাড়ি বা কামিজের সঙ্গে শীতের পোশাক হিসেবে শাল বা চাদরকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এর সর্বজনীনতা অগ্রাহ্য করার কোনো উপায় নেই। শাড়ি যেমন এই উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ঢঙে, নানা কায়দায় পরা হয়। একইভাবে শালও সবখানেই পোশাক-উপযোগী করে নানা স্টাইলে পরা যায়। শাড়ির সঙ্গে সাধারণত ধরে নেওয়া হয় সুতির বা উলের চাদর সবচেয়ে মানানসই।
উত্তর ভারতীয় অঞ্চলের শাল পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। আবার কাশ্মিরি শালের সুখ্যাতি উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহু আগেই চলে গেছে ইউরোপের মাটিতে। একরঙা, হালকা কারুকাজের কিংবা পুরো জমিনে অনবদ্য সূচিকর্ম করা শাল বেছে নিতে পারেন পছন্দ ও উপলক্ষ অনুযায়ী।
কার জন্য কেমন শাল মানানসই—এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, ‘শীত আমাদের সব রঙের পোশাক ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। প্রতি বছরই শীত এলে শালের ক্ষেত্রে ডিজাইনাররা রঙ নিয়ে খেলা করেন। রঙের খেলায় শালে নিয়ে আসা হয় নতুনত্ব। তারপরও বয়সের তারতম্যের ওপর নির্ভর করে শালের রঙ। সাধারণত অল্প বয়সী তরুণদের শালের রঙ হয় বেশ উজ্জ্বল এবং রঙিন। অন্যদিকে কিছুটা বয়স্ক মানুষের জন্য শালের রঙ কিছুটা অফ ওয়াইট, ক্রিম কিংবা একটু সফট টোনের। তবে আজকাল নিজেকে রাঙাতে সবাই বেছে নিচ্ছেন রঙিন শালগুলো। শালের ক্ষেত্রে পোশাক খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেদের ক্ষেত্রে সাধারণত পায়জামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে শাল সবচেয়ে বেশি মানানসই। তবে শার্ট-জিন্সের সঙ্গেও শাল মানিয়ে যায় বেশ।’ মেয়েরা শাড়ির সঙ্গে না সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে শাল পরবেন এমন সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে গেছে শাল। ফ্যাশনের অবিরাম পথচলায় এমন ধরাবাধা ধারণায় এখন আর তরুণীরা আটকে নেই। তারা শালকে সঙ্গে নিয়েই শীতকে মোকাবেলা করছেন। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ কিংবা পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায় শাল। তবে শাল পরা এবং শালের ধরন দুই ক্ষেত্রেই এসেছে খানিকটা বৈচিত্র্য। দেশি শালের মধ্যে মেয়েদের প্রথম পছন্দ খাদি শাল। তাতে ব্লক, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট করা থাকলেও তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে পাতলা সিল্কের শালগুলো মেয়েরা পরছে ওড়নার বদলেই।
বাজার ঘুরে শালের খবর নিয়ে দেখা গেছে, রুচিশীলতার তাগিদে বৈচিত্র্য এসেছে শীতের চমৎকার ডিজাইন প্যাটার্নের ডাবল কিংবা সিঙ্গেল শালে। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক শাল। নারীদের তুলনায় পুরুষদের শাল একটু বড় হয়ে থাকে। ছেলেদের শালগুলো কিছুটা সাদামাটা। তবে সবচেয়ে বেশি নান্দনিক সৌন্দর্য মেয়েদের শালে। এ বছর খাদি, উল, কটন কাপড়ের শাল দেখা যাচ্ছে। হাতে বোনা মোটা কটনের শালও রয়েছে। এছাড়াও কাশ্মিরি, দেশি সিল্কের শাল তো রয়েছেই। ডিজাইনের ক্ষেত্রে শাড়ি বা সালোয়ার কামিজের সঙ্গে ব্যবহার উপযোগী শালে ক্রিস্টাল ও স্টোন ব্যবহার করা হয়েছে। শীতে শালের ব্যাপক কালেকশন নিয়ে বাজারে নেমেছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। শীতের সময় রঙিন রঙের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বাজারে এসেছে রঙ-বেরঙের শাল। শীতের শুষ্কতাকে সজীব করতেই সবুজ, হলুদ, নীল, লাল, কমলা, বেগুনি রঙের শাল এনেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। এসব শালেও আছে স্ক্রিনপ্রিন্ট, টাইডাই, এমব্রয়ডারি কিংবা হাতের কাজ।
শীতের এ সময়টায় শালের পসরা সাজায় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। আড়ং, অঞ্জন’স, বাংলার মেলা, দেশাল, নিত্য উপহার, কে-ক্রাফট, নবরূপা, বিবিয়ানা, নগরদোলা, বাসন্তী, নিপুণসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস এরই মধ্যে শালের বৈচিত্র্যময় আয়োজন নিয়ে এসেছে। এছাড়া শাহবাগ আজিজ মার্কেট, বনানী ১১ নম্বর রোড, বেইলি রোড কিংবা মিরপুর ১০ নম্বরে গেলে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে নতুন নতুন ডিজাইনের শাল পাবেন। বিভিন্ন মার্কেটে একটু সাধারণ মানের শালগুলো পাওয়া যাবে ৫শ’ থেকে ১৫শ’ টাকার মধ্যে। ফ্যাশন হাউসগুলোতে কটনের শালের দাম পড়বে ৬শ’-৯শ’ টাকা, খদ্দর চাদর ৬৫০-১৫শ’ টাকা, সিল্ক শাল ৮শ’-আড়াই হাজার টাকা, কাশ্মিরি শাল কোয়ালিটি ভেদে দাম পড়বে ৬শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। যেকোনো শীত পোশাকের দোকানে গেলেই আপনার চোখে পড়বে হরেক রকম শাল। বঙ্গবাজার, ধানমন্ডি, হকার্স মার্কেট, ফার্মগেট, নিউ মার্কেটে কিছুটা কম দামে শাল পাবেন। সূত্র: ইত্তেফাক
মডেল: মীম ও সানজানা
পোশাক: রঙ বাংলাদেশ
মেকআপ: মিউনী’স ব্রাইডাল