সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। সরকার যদি এই প্রকল্প বাতিল না করে, তাহলে ২৬শে জানুয়ারি ঢাকায় অর্ধদিবস সর্বাত্মক ধর্মঘট ও হরতাল কর্মসূচি পালন করা হবে। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রামপালসহ সুন্দরবনবিনাশী সব প্রকল্প বাতিল ও সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে ডাকা মহাসমাবেশ শেষে কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ এ ঘোষণা দেন। এসময় তিনি পাঁচটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যার মধ্যে রয়েছে- আগামী ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সুন্দরবন রক্ষায় এবং রামপাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় কমিটি। ৭ই জানুয়ারী বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ দিবস ও ১৪ই জানুয়ারী মহাপরিকল্পনা উপস্থাপন। এর মাঝেও দাবি না পূরণ না হলে ২৬ জানুয়ারী ঢাকা মহানগরে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেয়া হবে। সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি টিএসসি, শাহবাগ, মৎস্য ভবন হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারের যদি জনমতের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ থাকতো তাহলে এ প্রকল্প বহু পূর্বেই বাতিল করে দিত। এ প্রকল্পের ফলে সুন্দরবনের ৩৫ লক্ষ মানুষ তার জীবিকা হারাবে, ৫ কোটি মানুষ তাদের প্রাকৃতিক দূর্যোগে সুরক্ষা হারাবে। আমরা ২০১১ সাল থেকে নানা তথ্য ও প্রমাণ দেখিয়ে বলে আসছি এসব ক্ষতির কথা। কিন্তু সরকার এ কথায় কান দিচ্ছেন না। বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, দূর্নীতির মহাসড়কে মানুষ চাপা দিয়ে আর পরিবেশ ধব্বংস করে চলছে সরকার। সরকার বর্তমানে আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে ডিজিটাল গণতন্ত্র প্রবর্তন করে দেশ শাসন করছে। পাকিস্তানিদের আদলে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও আদিবাসী উচ্ছেদের মাধ্যমে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখছে। তিনি বলেন খোদ রাজধানীর পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ যেখানে কমাতে পারছেনা সরকার সেখানে কিভাবে সুদূর সুন্দরবনের নদীর দূষণ কমাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের এ কথিত উন্নয়নের ফলে পরবর্তীতে যে দূর্ঘটনা ঘটবে আমরা সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করতে চাইছি। আমরা উন্নয়নের নামে ঐ এলাকার মানুষের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বলছি। এ উন্নয়ন পুজিবাদীদের উন্নয়ন। ঢাবির অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, জাতিসংঘ সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরিয়ে নিতে। তাও সরকার কেন সরিয়ে নিচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সময় থাকতে রামপাল চুক্তি বাতিল করুন। তা না হলে এই জন জনস্রোত সরকারের গদি নাড়িয়ে দিতে সক্ষম।মানবাধিকার সেচ্ছাসেবক এ এস এম সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ৩৫ লক্ষ মানুষের এই বৃহৎ জনগোষ্ঠী জীবিকা হারালে তা হবে মানবতার বিপর্যয়। তিনি সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নির্যাতনের জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন এই সকল নির্যাতনের মানবাধিকারের লংঘন।