দুর্নীতির মামলায় ইমরান খানের ১৪ বছরের কারাদণ্ড
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আপডেট: ২০২৫-০১-১৭ ১৪:১৬:৫০
বহুল আলোচিত আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। একই মামলায় তার স্ত্রী বুশরা খান বিবিকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি আলোচিত এই মামলার রায় তৃতীয়বার স্থগিত হয়। মামলাটি আল-কাদির ট্রাস্ট নামে একটি দাতব্য সংস্থাকে ঘিরে, যা ২০১৮ সালে ইমরান খান ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই সময় ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
এ বিষয়ে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ট্রাস্টটি আসলে ছদ্মবেশী সংস্থা, যার মাধ্যমে ইমরান খান ও বুশরা খান দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রিয়েল-এস্টেট ব্যবসায়ী মালিক রিয়াজ হুসেইনের কাছ থেকে ঘুস হিসেবে মূল্যবান জমি গ্রহণ করেছেন। মালিক রিয়াজ হুসেইনকে পাকিস্তানের ধনী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন। ইমরান খান ও বুশরা খান সবাই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শুক্রবারের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পিটিআই জানিয়েছে, তারা বিস্তারিত রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে এবং তাদের দাবি, ইমরান খান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা মামলাটি ভিত্তিহীন।
পিটিআইয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সব প্রমাণ এবং সাক্ষীদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে এখানে কোনো দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনার ঘটনা ঘটেনি। ইমরান খান ও বুশরা বিবি কেবল ট্রাস্টি হিসেবে ছিলেন, এর বাইরে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।
এই রায় ইমরান খানের জন্য একটি বড় ধাক্কা, যিনি ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকেই একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। তার দল ও সমর্থকরা এই রায়কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল হিসেবে দেখছেন এবং এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ নিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের সদস্য সিনেটর তালাল চৌধুরী আল-কাদির ট্রাস্ট মামলাকে স্পষ্ট ও দ্রুত নিষ্পত্তিযোগ্য” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই মামলা নিয়ে ইমরান খানের সঙ্গে এতে কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন।
তালাল চৌধুরী বলেন, আজ হোক বা কাল, এটি একটি স্পষ্ট রায়। এটি একটি সোজাসাপ্টা মামলা। এটি পাকিস্তানের জন্য এবং এখানে ক্ষমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি, আল-কাদির ট্রাস্ট প্রকল্পের সূচনা হয় ২০১৯ সালে, যখন ব্রিটেন থেকে ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ড পাকিস্তানে ফেরত আনা হয়। এই অর্থ মালিক রিয়াজ হুসেইন অপরাধমূলক সম্পদ হিসেবে জব্দ হওয়া অর্থ ও সম্পত্তি ব্রিটিশ তদন্তের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হন।
অভিযোগ রয়েছে, ইমরান খানের সরকার এই অর্থ পাকিস্তানের কোষাগারে জমা না দিয়ে, করাচিতে সরকারি জমি কম দামে অবৈধভাবে অধিগ্রহণের জন্য হুসেইনের বিরুদ্ধে আদালতের আরোপিত জরিমানা পরিশোধে ব্যবহার করেছে।
ইমরান খান, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দি এবং একাধিক আইনি মামলার মুখোমুখি। তিনি দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে প্রধানমন্ত্রী ও দেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইমরান খানের এই মামলায় কারাদণ্ড ও তার বিরুদ্ধে আনা অন্যান্য অভিযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বাড়ছে। পিএমএল-এন এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
এনজে