গাজর একটি মূলজ সবজি, বৈজ্ঞানিক নাম ডকাশ ক্যারোটা। গাজর যেমন পুষ্টিকর, তেমনি শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। আমরা কাঁচা, রান্না করে বা হালুয়ায় গাজর খেয়ে থাকি। গাজর এ প্রধানত ভিটামিন এ পাওয়া যায়। তাছাড়া এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, শ্বেতসার এবং অন্যান্য ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। গাজর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোসহ দেহের নানান সমস্যার সমাধান করে থাকে। তাই দিনে অন্তত দুটি গাজর খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক গাজরের কিছু পুষ্টিগুণ।
১. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গাজরে উপস্থিত ফ্যালকেরিনল এবং ফ্যালকেরিনডায়ল উপাদান আমাদের শরীরে অ্যান্টিক্যান্সার উপাদানগুলোকে পূর্ণ করে। নিয়মিত গাজর খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলোন ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। এছাড়া গাজর চামড়ার ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন মধ্যম আকৃতির গাজর খেলে ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়। গবেষকদের মতে, যারা নিয়মিত গাজর খান তাদের প্রায় ৭০% মানুষ চামড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান।
২. লিভার সুস্থ রাখে : গাজর একটি ডেটক্স খাদ্য হিসেবে পরিচিত। ডেটক্স খাদ্যসমূহ লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গাজর লিভারকে পরিস্কার করে। লিভারের সব ধরনের রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। গাজর লিভারে জমে থাকা মেদ দূর করতে সব থেকে কার্যকরী একটি ওষুধ।
৩. কার্ডিওভ্যাস্কুলার রোগ প্রতিরোধ করে : গবেষণায় দেখা যায়, যারা কোলেস্টোরলের সমস্যায় ভোগেন তারা যদি প্রতিদিন একটি করে গাজর খাদ্য তালিকায় রাখেন তাহলে কোলেস্টোরলজনিত বেশিরভাগ রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। কারণ গাজরে রয়েছে আলফা ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন ও লুটেইন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা কোলেস্টোরলের বিরুদ্ধে কাজ করে ও হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও গাজরে বিদ্যমান ফাইবার দেহের খারাপ কোলেস্টোরল শুষে নেয়। এতে দেহে কোলেস্টোরলের মাত্রা ঠিক থাকে এবং হৃৎপিণ্ডকে কোলেস্টোরলজনিত প্রায় সব ধরনের রোগ থেকে বাঁচায়।
৪. চোখের সুরক্ষায় গাজর : গাজর ভিটামিন এ উপাদানে সমৃদ্ধ। ভিটামিন এ চোখের সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়াও গাজরের বিটা ক্যারোটিন লিভারে ভিটামিন এ’তে পরিণত হয় যা সরাসরি রেটিনাতে পৌঁছায়। তারপর এই ভিটামিন এ রেটিনা থেকে রডোপ্সিনে যায়। রডোপ্সিন একটি হালকা বেগুনি রঙের পিগমেন্টট যা রাতের বেলার দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। সুতরাং গাজর রাতকানা রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে।
৫. দাঁতের সুরক্ষায় গাজর : দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় গাজরের গুরুত্ব অনেক বেশি। গাজর খেলে দাঁত পরিষ্কার হয়। দাঁতে জমে থাকা প্লাক দূর হয়। ডাক্তাররা বলেন, গাজর খাওয়ার সময় আমাদের মুখে ‘সিলভা’ নামক একটি যৌগের নিঃসরণ ঘটে। সিলভা মুখে অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখে যা দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। প্রতিদিন একটি করে গাজর খেলে মাড়ি ও দাঁতের সমস্যা দূর হয়।
৬. চেহারায় বয়সের ছাপ দূর করে : গাজরে বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন ত্বকের ক্ষতি পূরণ করতে সাহায্য করে। বিটা ক্যারোটিন খুব ভালো একটি অ্যান্টিএজিং এর উপাদান যা মুখের বয়সজনিত দাগ ও রিঙ্কেল দূর করে। গাজর খেলে মুখে বয়সের ছাপ ধীরগতিতে আসে। গবেষকরা বলেন, সপ্তাহে ৬টি গাজর চেহারার বয়সের ছাপ দূর করে । ৭. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : মানুষের কোষের ডিএনএতে ক্ষতির কারণে বেশ কিছু ক্রনিক অসুখ শরীরে তৈরি হয়। গাজরে থাকা ক্যারোটিনয়েডসগুলো (বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন ও লাইকোপেন) এই ক্ষতি কমিয়ে দিতে পারে এবং বয়সজনিত বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
৮. রক্ত পরিষ্কার করে : গাজর রক্ত পরিষ্কার করে। গাজর খেলে ত্বক কোমল ও সুন্দর হয়। ত্বক ফর্সা করতে এবং মুখের সৌন্দর্য বাড়াতে বেশি বেশি গাজর খেতে পারেন। যাদের পেটে গ্যাস হয় তারা গাজর খেয়ে উপকার পাবেন।
৯. অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে : গাজর ভাল অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবেও কাজ করে। এটি শরীরে কোনো ক্ষত হলে তা ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। কোথাও কেটে বা পুড়ে গেলে সেখানে লাগিয়ে নিন কুচি করা গাজর বা সিদ্ধ করা গাজরের পেস্ট। আপনার ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
১০. সুন্দর ত্বকের জন্য গাজর : সুন্দর ত্বকের জন্যও গাজর খেতে পারেন। এটি আপনার ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করবে। এর ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করবে। সেই সাথে ভিটামিন এ ত্বকের অযাচিত ভাঁজ পড়া, কালো দাগ, ব্রন, ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করবে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস