ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। মৃত সন্তানকে বুকে জড়িয়ে মায়ের আহাজারি আছড়ে পড়ছে দেয়ালে দেয়ালে। কান্না জড়িত কণ্ঠে চিৎকার করে বলছেন, ‘বাবা মরার পর আমি এতিম হই নাই, আজ হইয়া গেলাম। আমার পুত (ছেলে) আমারে ছাইড়া চইলা গেছে। ও আমার পুত, কথা বল।
মো. সাব্বির। মাত্র ১১ বছর বয়স। রাজধানীর কামরাঙ্গির চর পূর্ব রসুলপুরের চার নম্বর গলিতে একটি টিনশেড বাড়িতে তার পরিবারের বসবাস। দুই ভাই, এক বোনের সংসারে সে-ই সবার বড়। লেখাপড়া করতো কাছেরই একটি স্কুলে। বাবা জাহাঙ্গির আলম ছোটখাট একটি জুতার কারখানা পরিচালনা করেন। আর মা রাজিয়া তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে।
রোববার (২৫ অক্টোবর) নিজ বাড়িতে মায়ের ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেয় সাব্বির। ঘটনার সময় বাড়িতে দুই ছোট ভাই-বোন ছাড়া আর কেউ ছিল না। বাবা-মা কাজে গেছেন। কোনো এক ফাঁকে জীবনের পথচলা শুরুর আগেই শেষ টেনে দিল সাব্বির।
সন্তানের এ অকাল মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মা রাজিয়া। তার মরদেহ বুকে জড়িয়ে আহাজারিতে ভারী করে তুলছেন ঢামেক জরুরি বিভাগের পরিবেশ।
কাঁদতে কাঁদতে রাজিয়া বলেন, বড় পুতের (ছেলে) কাছেই ছোট দুইটারে রাইখা কামে যাইতাম আমরা। আইজও গেছিলাম। দুপুরে ফিরা দেখি বাড়ির দরজা বন্ধ। কোনো সাড়াশব্দ নাই। পেছনের জানালা দিয়া দেখি, পুত আমার ঝুলে আছে।
তিনি বলেন, সকালে কামে যাওনের সময় পুত ভাত খাইতাছিল। কইছিলাম, খাইয়া যেন পড়তে বহে। আমার পুত আমারে এতিম বানাইয়া চইলা গেল।
খবর পেয়ে ঢামেকে ছুটে এসেছেন সাব্বিরের বাবা জাহাঙ্গিরও। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানালেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছোট ছেলে তানভিরের (৭) সঙ্গে সাব্বিরের ঝগড়া হয়। ঝগড়া থামাতে তিনি সাব্বিরকে শাসন করেন এবং তার মা বাড়ি ফিরলে বিচার দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তিনিও কাজে চলে যান।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মুমূর্ষু অবস্থায় সাব্বিরকে ঢামেক জরুরি বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস