সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। আর মানবকুলের মধ্যে সেরা ছিলেন আখেরি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পরশ পাথরের মতো। যার সংস্পর্শে এসে সাহাবারা সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। তারা জাগতিক লোভ-লালসাকে ত্যাগ করে আল্লাহ প্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সমাজের সব মানুষের প্রতি তারা যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন তা দৃষ্টান্ত স্থানীয়। সাহাবাদের জীবনযাপন কেমন ছিল নিচের হাদিসগুলো থেকে তা অনুধাবন করা যায়।
মুহাম্মদ ইবনে জিয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সালফে সালেহীনকে (পূর্ববর্তী যুগের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব) দেখেছি, তাদের কয়েক পরিবার যৌথভাবে একই বাড়িতে বসবাস করতেন। কখনো কখনো তাদের কোনো পরিবারে মেহমান আসত এবং তখন হয়তো অপর পরিবারের চুলায় খাবার রান্না হতো। আতিথ্য দানকারী পরিবার চুলার ওপর থেকে তা তুলে নিজের মেহমানের জন্য নিয়ে আসত। মালিক তার হাঁড়ির খোঁজে এসে তা না দেখে বলত, কে খাদ্য ও হাঁড়ি নিয়ে গেছে? আপ্যায়নকারী পরিবার বলত, আমরা তা আমাদের মেহমানের জন্য নিয়ে এসেছি। হাঁড়ির মালিক বলত, আল্লাহ ওই খাদ্যে তোমাদের বরকত দান করুন। মুহাম্মদ (সা.) বলেন, রুটির ক্ষেত্রেও এরূপ হত (আদাবুল মুফরাদ)।
পরস্পরের প্রতি অত্যধিক আস্থা ও বিশ্বাস থাকলেই কেবল এরূপ করা যায়। অন্যথায় সাধারণ অবস্থায় এই ধরনের সরল ও অকৃত্রিম আচরণ তিক্ততার সৃষ্টি করতে পারে।
আবদুর রহমান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ রুক্ষ মেজাজেরও ছিলেন না আবার মৃতবৎও ছিলেন না। তারা নিজেদের মজলিসে কবিতা পাঠ করতেন এবং জাহিলি যুগের ঘটনাবলিও আলোচনা করতেন। কিন্তু তাদের কারও কাছে আল্লাহর হুকুমের পরিপন্থী কোনো কিছু আশা করা হলে তার উভয় চোখের মণি ঘুরতে থাকত। যেন তারা পাগল (আদাবুল মুফরাদ, অনুচ্ছেদ : কিব্র) অর্থাৎ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহচর্য লাভ করে তারা এমন ভারসাম্যপূর্ণ মেজাজের অধিকারী ছিলেন যে, তারা পাদ্রী-পুরোহিত ও সংসারত্যাগীদের মতো সম্পূর্ণ রুক্ষ স্বভাবের ছিলেন না, আবার দুনিয়াদার লোকদের মতো সব সময় হাসি-কৌতুক এবং গালগল্পেও মেতে থাকতেন না। বরং কৌতুকের স্বাদ গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মন দীনি আবেগে পরিপূর্ণ থাকত।
লেখক : ইসলামী গবেষক