এ কারণে ওসাকা শহরের মতোই রাজধানীর মাটির ২০ থেকে ২৫ মিটার গভীরে পাতালরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী, পরিবেশবিদ, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে পাতালরেল নির্মাণের লক্ষ্যে সভা হয়।
সভায় বলা হয়, জাপানের ওসাকা শহরের আদলে ২০ থেকে ২৫ মিটার গভীরে পাতালরেল নির্মাণ করা যেতে পারে। তবে যেহেতু এ জাতীয় জটিল কারিগরি প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, সেহেতু দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে সম্ভাব্য সমীক্ষা পরিচালনা করতে হবে।
সভায় আরও বলা হয়, পাতালরেল নির্মাণে টানেল খননে অত্যাধুনিক টানেল বোরিং মেশিন ব্যবহৃত হয় বলে নির্মাণকালীন জনদুর্ভোগ খুবই কম। পরিবেশ বিপর্যয়ও হয় না বলা বললেই চলে। সাবওয়ে নির্মিত হলে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করবে। ফলশ্রুতিতে ভূমির উপরিভাগে জনসংখ্যার চলাচল কমে ঢাকায় যানজট কমে আসবে।
সড়কপথে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারেন, সেখানে পাতালরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। উড়াল সেতুর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ৫০ থেকে ৭৫ বছর হলেও পাতালরেলের স্থায়িত্বকাল প্রায় ১০০ থেকে ১২৫ বছর হবে।
সভায় একমত পোষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকা শহরের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ। বিদ্যমান সড়কের ধারণ ক্ষমতা ০ দশমিক ৩ মিলিয়ন হলেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের(বিআরটিএ) হিসাব অনুসারে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ০ দশমিক ৯ মিলিয়ন। এ পরিস্থিতিতে বিআরটি, ঢাকা মেট্রো, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল দিয়ে যানজটের সম্পূর্ণ নিরসন সম্ভব নয়। আধুনিক বিশ্বের সিউল, লন্ডন, নিউইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো, বাগোটা শহরে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অপসারণ করে পাতালরেল নির্মাণ করা হয়েছে।
এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের পলি মাটির সঙ্গে জাপানের ওসাকা শহরের যথেষ্ট মিল রয়েছে। এ নরম মাটি পাতালরেল নির্মাণের উপযোগী। আমাদের পাশের কলকাতা শহরেও পাতালরেল নির্মাণ করা হয়েছে। তাদের মাটির সঙ্গেও আমাদের মিল রয়েছে। আবার লন্ডনে শক্ত মাটির নিচ দিয়েও পাতালরেল নির্মাণ করা হয়েছে। প্রযুক্তিকে ভালোভাবে ব্যবহার করলে পাতালরেল নির্মাণে কোনো ঝুঁকি নেই’।
ঢাকা শহরে পাতালরেল (সাবওয়ে) পথ নির্মাণের লক্ষ্যে চারটি রুট চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এজন্য প্রাথমিকভাবে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।
সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, সমীক্ষা প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের পাঠানো হয়েছে। ২৪২ টাকা কোটি ব্যয়ে এ সমীক্ষা পরিচালনা করা হবে। ১৮ মাসের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে এ সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় পাতালরেলের অবস্থান, এলাইনমেন্ট ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ, জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ও ট্রাফিক সার্ভে পরিচালনা করা হবে। প্রাথমিক নকশা, ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা ও আর্থিক বিশ্লেষণ করা হবে। এর পরেই বিশাল ব্যয়ের মেগা প্রকল্পটি গ্রহণ করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, যা বাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে অথবা জিটুজি ভিত্তিতে মূল পাতালরেল নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় মেটানোর পরিকল্পনা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) ভৌত অবকাঠামো বিভাগে সমীক্ষা প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির(পিইসি) সভা ডাকা হয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আলীম উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে আমাদের পাতালরেল নির্মাণ করতেই হবে। তবে বিশাল বাজেটের এ প্রকল্প এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হবে না। আমরা বিদেশি কোনো কোম্পানির মাধ্যমে অথবা জিটুজি পদ্ধতিতে পাতালরেল নির্মাণ করবো। নির্মাণের পর নির্দিষ্ট সময়ে কোম্পানি অথবা ঋণদাতা দেশ টাকা তুলে নিয়ে যাবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘২০ থেকে ২৫ মিটার গভীরে পাতালরেল নির্মাণের ফলে ইউটিলিটি অপসারণ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকবে না’।