অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, চুরি হওয়া রিজার্ভের অবশিষ্ট টাকার সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। কিছু টাকা ফেরত পেয়েছি বাকি টাকার বিষয়ে ফিলিপাইনের পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি এবং ব্রিটিশ মেয়রদের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।
ড. ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশের বিষয়ে এর আগে তিনি বেশ কয়েকবার সময় বেধে দিয়েছিলেন। এর মাঝে ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষও প্রতিবেদনটি চেয়ে পাঠায়। কিন্তু বিষয়টি গোপনীয় বলে তা ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষকে দিতে অস্বীকার করে সরকার।
এক সাংবাদিক জানতে চান তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় হয়েছে কি-না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘না এখনো হয়নি। ফিলিপিন্সের সঙ্গে কিছু বিষয়ে সমাধান হলে প্রতিবেদন প্রকাশ করবো।’
তিনি বলেন, ‘নিজের দায় এড়িয়ে কেউ এই প্রতিবেদন থেকে সুবিধা পাক, সেটা আমি চাই না। রিজাল ব্যাংক চুরির টাকা নিয়ে বাহাদুরি করছে। তারা এটা করতে পারে না। টাকার মালিককে টাকা ফেরত দিতেই হবে। রিজাল ব্যাংকের এটিচুড গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টির সমাধান হোক, তারপর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।’
এদিকে বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের যে ব্যাংক থেকে জালিয়াতদের হাতে গেছে সেই রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক (আরসিবিসি) বলছে, এ ঘটনায় তাদের কোনো দায় নেই।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের কমার্শিয়াল ব্যাংকে। আর আরেক মেসেজে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।
শ্রীলঙ্কায় পাঠানো ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া অর্থ শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশির ভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে।
সাম্প্রতিক কালের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদ ছাড়তে বাধ্য হন। পরিবর্তন আসে ব্যাংকটির উচ্চ পর্যায়ে।
রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির তদন্তের মাধ্যমে কিম অং নামের এক ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দেড় কোটি ডলার সে দেশের সরকারের হাতে ফেরত দেন। আদালতের প্রক্রিয়া শেষে ওই অর্থ বাংলাদেশের হাতে আসে।
বাকি অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপিন্স সফর করে এলেও বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার ফেরত পাওয়ার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় রিজাল ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার জরিমানা করেছে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই জরিমানার অর্থ পরিশোধ করলেও বাংলাদেশের পাওনা বাকি অর্থ ফেরতের বিষয়ে তাদের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে অর্থমন্ত্রী বিশ্বাস করেন বাকি অর্থও ফেরত পাওয়া যাবে। হয়তো কিছুটা সময় লাগবে।