যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার শপথের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বারাক ওবামার দুই মেয়াদে আট বছরের শাসনামল।
শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ট্রাম্প জমানার সূচনা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সবার আগে’ রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। ডান হাত উপরে তুলে, বাঁ হাত বাইবেলের ওপর রেখে শপথ পড়েন তিনি। শপথ নেওয়ার সময় দু্ই হাতে বাইবেল ধরে রেখেছিলেন মেলানিয়া ট্রাম্প। এই বাইবেলটি স্পর্শ করে শপথ পড়েছিলেন আব্রাহাম লিংকন।
শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সূচনা হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানা। বেশ কয়েকজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, ঊর্ধ্বতন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার মানুষ তার অভিষেকে হাজির হন। বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনে অসংখ্য মানুষ ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান দেখেছেন।
শুক্রবার সকালে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শেষ হয় হোয়াইট হাউসে ফেরার মধ্য দিয়ে। আজ থেকে আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউস হলো ট্রাম্পের ঠিকানা। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্টের আবাসিক কার্যালয় হোয়াইট হাউস বিশ্বের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত। ক্যাপিটল হিলে ওবামা দম্পতিকে বিদায় জানিয়ে কংগ্রেসে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন ট্রাম্প। সেখান থেকে বেরিয়ে প্যারেড পরিদর্শন ও সামরিক অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও তার স্ত্রী। এরপর গাড়িতে কিছু দূর এগিয়ে প্যারেড ওয়াক করেন ট্রাম্প। রাস্তার দুই পাশে তার সমর্থকরা তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এরপর নিয়মমাফিক কাজ শেষে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন।
শপথের পর অভিষেক ভাষণে বহু বিতর্কের জন্মদাতা ট্রাম্প বলেন, ‘নতুন দর্শনে আজ থেকে আমাদের এই ভূমি পরিচালিত হবে। আজ থেকে সবার আগে থাকবে আমেরিকার স্বার্থ, সবার আগে থাকবে আমেরিকা।’
শপথ গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্বনেতারা বার্তা পাঠিয়েছেন।এক শুভেচ্ছা বার্তায় পোপ ফ্রান্সিস গরিবদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে কাজ করার আহ্বান জানান তার প্রতি। প্রতিবেশী কানাডা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে তাকে।
এদিকে, ট্রাম্পের শপথের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনিশ্চিত পথে যাত্রা শুরু করল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনিশ্চিত এই অর্থে যে, তার কর্মকাণ্ডের ভবিষ্যৎ বোঝা যাচ্ছে না। তার বক্তব্য থেকে মনে হয়, তিনি কী করবেন বা করতে চান, তা শুধু তিনিই জানেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কথা বলে থাকেন। যে বিষয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উপদেশ দিয়েছেন, একা কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে।
ট্রাম্প রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ। নির্বাচনে আসার আগে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নেই তার। তিনি অভিজ্ঞ ব্যবসায়। চুক্তি ও মুনাফার শর্তে মানুষের সঙ্গে তার চলাচল। এমন একজন ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলেন। ফলে তাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শুক্রবার তার শপথ অনুষ্ঠানের দিনে বিভিন্ন দেশে মার্কিন দূতাবাসকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। নাইজেরিয়া, তিউনিশিয়াসহ বেশ কিছু বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়েছে।
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে কম জনসমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প। এবিসি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্টের জনমত জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্টের পদে বসলেন তিনি।আগের তিন প্রেসিডেন্টের জনসমর্থনের চেয়ে অনেক কম। তা ছাড়া ট্রাম্পের শপথকে ঘিরে ওয়াশিংটন ডিসি বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। শতাধিক বিক্ষোভকারী এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
তবে দীর্ঘদিন পর ট্রাম্পের কল্যাণে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমন আভাস ট্রাম্প এর আগেই দিয়েছেন, এবার বাস্তবায়নের পালা। ট্রাম্পের অভিষেকে রাশিয়ায় উল্লাস দেখা গেছে।
ট্রাম্পের অভিষেক ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে জাতি বিভক্তি চরমে পৌঁছেছে। জনমত জরিপের তথ্যমতে, শেষ পর্যন্ত ৩৭ শতাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় বসলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ৮৬ শতাংশ মানুষ মনে করে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে জাতি বিভক্তি বিরাজ করছে। এর মধ্যে ২৪ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই কাজ শুরু করেন ট্রাম্প। তা ছাড়া যেসব কাজ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে করা যায় তা তিনি করে ফেলতে চানা। এক্ষেত্রে মোটেও দেরি করতে রাজি নন ট্রাম্প।