মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এখন বিদায়ের সুর বাজছে। বিদায়ের দিনক্ষন যতোই ঘনিয়ে আসছে মেলায় ভিড়বাট্টা ততোই বাড়ছে। এখন প্রতিদিনই লাখের বেশির দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করছেন। ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে কেনাকাটা। মাসব্যাপী মেলার শেষ শুক্রবার কোথায় ঠাঁই ছিলো না। শুধুমাত্র মেলা কেন্দ্র নয়, পুরো আগারগাঁও এলাকা জুড়ো ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জটলা দেখা গেছে। এদিকে মেলার বিদায় লগ্নে ক্রেতা টানতে আখেরি অফারসহ বিশাল ছাড়ের অফার দিচ্ছেন মেলায় অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা। আজ বাণিজ্যমেলা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনের পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের শেষ শুক্রবার হওয়ায় ঢাকা ও তার আশপাশ এলাকা থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে সকাল সকাল মেলায় আসতে শুরু করে দর্শনার্থী ও ক্রেতারা। আর দুপুরের পর আগারগাঁওয়ের শেরে-বাংলা নগর এলাকা কানায় কানায় ভরে যায়। সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিলো মেলা প্রাঙ্গন। শেষ মূহুর্তে এসে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। পছন্দের পণ্য কিনতে ব্যস্ত ক্রেতারা। তাই ছুটির দিনে দম ফেলার ফুসরত পাননি দোকানীরা। এদিকে মেলার নামি-দামি প্যাভিলিয়ন থেকে শুরু করে সব ধরণের ষ্টলে ছিলো ক্রেতাদের উপচে-পড়া ভিড়। অনেকেই বলছেন সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ায় সকাল সকাল তারা মেলায় এসেছেন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। মেলায় সিলভারের হাড়িপাতিল, লোহার জিনিসপত্র ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্রসহ অন্যান্য দোকানগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্যণীয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগারগাঁয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মূল ফটকের সামনে থেকে লাইন ধরে সারিবদ্ধভাবে ক্রেতা-দর্শণার্থীরা মেলায় প্রবেশ করছেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের ভীড়। সব বয়সের মানুষেরা এসেছেন মেলায়। কেউ বা পরিবারের সঙ্গে কেউবা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে মেলায় এসেছেন। নিজের পছন্দের মানুষদের নিয়ে কেনা-কাটায় ব্যস্ত তারা।
বাণিজ্য মেলায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্যাভিলিয়ন এবং স্টলগুলোতে চলছে ছাড়ের ছড়াছড়ি। মাসব্যাপী মেলায় শেষ সপ্তাহে গৃহস্থালী পণ্য, শিশুদের খেলনা, নারীদের গহনা, নারী-পুরুষের পোশাক এবং খাবার-দাবারসহ সব ধরনের পণ্যে বিশেষ ছাড় দিয়েছে স্টলগুলো। আর এই সুযোগে নিজেদের পছন্দ মতো প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য কোনো রকম দরদাম ছাড়াই কিনছেন ক্রেতারা।
মেলায় ওয়ালটন মেগা প্যাভিলিয়নে টেলিভিশনে রয়েছে চমকের পর চমক। ১৯ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৯৮ ইঞ্চি পর্যন্ত অসংখ্য মডেলের টেলিভিশন দিয়ে সাজানো হয়েছে ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের নিচতলার একটি অংশ। মেলায় বিশেষ ছাড় ও আকর্ষণীয় উপহারসহ সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যাচ্ছে মানসম্মত ওয়ালটন টেলিভিশন। অসংখ্য মডেল থাকায় নিজের পছন্দের টেলিভিশনটি কিনে নিতে পারায় সন্তুষ্ট ক্রেতারাও। গতকাল বাণিজ্য মেলায় ওয়ালটন মেগা প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে টেলিভিশন ও রেফ্রিজারেটরের সামনের ভিড় চোখে পড়ার মতো। প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করে হাতের ডান পাশে রয়েছে সবচেয়ে বড় স্মার্ট টিভি। পাশেই রয়েছে ডিজিটাল টাচ বোর্ড। তারপরে ডান পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে ওয়ালটন টেলিভিশন। এর মধ্যে কিছু মডেল আপকামিং ও কিছু মডেল বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। ওয়ালটন মেগা প্যাভিলিয়নে কেউ এসেছেন স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে, কেউ এসেছেন একা। আবার কেউ কেউ এসেছেন দেখতে। টেলিভিশন বিভাগের আখলাক জানান, মেলা থেকে ওয়ালটন টিভি কিনলে ৫ শতাংশ মূল্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বেশ কিছু মডেলের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে আকর্ষণীয় উপহার। টেলিভিশন বিভাগের কায়ছার আহম্মেদ জানান, ওয়ালটন টেলিভিশনে ছয় মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি, দুই বছরের স্পেয়ার পার্টস ওয়ারেন্টি ও পাঁচ বছরের ফ্রি সার্ভিসের সুবিধা রয়েছে। আর সারাদেশেই রয়েছে ওয়ালটনের সার্ভিস সেন্টার। আখলাক আরো জানান, মেলায় ১৯ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৫৫ ইঞ্চি পর্যন্ত টেলিভিশন বিক্রি করা হচ্ছে। দাম ৮৯৯০ টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ দশ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই দামের ওপর ৫ শতাংশ মূল্য ছাড়সহ দেওয়া হচ্ছে আকর্ষণীয় উপহার।
ছেলে এবং মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছেন কল্যাণপুরের মো. ফরিদুল ইসলাম। মেলায় আসার উদ্দেশ্য টেলিভিশন কেনা। তিনি ওয়ালটন থেকে ৩৯ ইঞ্চি একটি টেলিভিশন কিনেছেন। কেনার পর ক্যাশ কাউন্টারে বিল পরিশোধ করার জন্য বসে আছেন। এ সময় তাকে খুবই উৎফুল্ল ও পুলকিত মনে হচ্ছিল। মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি অন্য কয়েক জায়গা ঘুরে কয়েকটি ব্র্যান্ড দেখে তারপর ওয়ালটন মেগা প্যাভিলিয়নে এসেছেন। ওয়ালটনে এসে অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় সাশ্রয়ী দামে মানসম্মত টেলিভিশন কিনতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ওয়ালটন আমাদের পণ্য। ওয়ালটন টেলিভিশনের শেফ ভাল, পছন্দ হওয়ার মতো। কালারসহ সবকিছু দেখে ভাল লেগেছে। তার চেয়ে বড় কথা, একই মানের অন্য ব্র্যান্ডের ৩৯ ইঞ্চি টেলিভিশনের চেয়ে ওয়ালটন টেলিভিশন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা কমে পেয়েছি। সেই সঙ্গে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিসকাউন্টও পেয়েছি।
এদিকে ছুটির দিনকে ঘিরে দোকানিদের ছিলো নানা ধরণের অফার। একটি কিনলে ১০ টি ফ্রি, একটি কিনলে ২ টি ফ্রি, মুঠোফোন কিনলে শীতের ব্লেজার ফ্রি, নগদ অর্থছাড়সহ রয়েছে নানা ধরণের ছাড়ের ছড়াছড়ি। মেলায় ফরেন প্যাভিলিয়নে হোমটেক্সের সহযোগি প্রতিষ্ঠান আমজদ এ গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে মেলামাইন প্লেট, পাপসসহ প্রায় ৫০ ধরণের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ টাকায়। এছাড়া মিয়কোর স্টলে পণ্যভেদে সর্বোচ্ছ ১ টি পণ্যের সঙ্গে ১০ টি পণ্য ফ্রি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া গহনার দোকানগুলোতে রয়েছে নগদ মূল্য ছাড়সহ নানা আর্কষণীয় অফার। এতে বাড়ছে দোকানের বেচা-কেনা। ভিড় করছেন ক্রেতারা। কসমেটিকস এর দোকানগুলোতে ছিলো তরুণীদের উপচে পড়া ভিড়। এদিকে শীতের সময়ে গরম কাপড়ের বিক্রি তুঙ্গে থাকে। তাই শীতকালীন সময়ে গহওয়া এ মেলায় ব্লেজারের স্টলে ছিলো তরুণদের ভিড়। শুরু দিকে দেড় হাজার টাকা করে ব্লেজার বিক্রি হলেও মেলার শেষ সময়ে এসব স্টলে চলছে আখেরি অফার। সর্বশেষ এসব ব্লেজার এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়।
এদিকে দেশি-বিদেশি গহনার স্টলের পাশাপাশি গৃহস্থলি পণ্যের স্টলে ভিড় ছিলে অনেক বেশি। কয়েকজন স্টল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য হওয়ায় গৃহস্থলী পণ্যের বিক্রি ছিলো সবচেয়ে বেশি। গত বছরের তুলনায় এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি বেচা-কেনা হবে। তবে মেলার শেষ সময়ে বেচা-কেনার পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, গৃহস্থালী পণ্যে ছাড়ের প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি। গৃহস্থালী পণ্যে প্রাণ আরএফএল-এ ১০ শতাংশ থেকে কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। একই অবস্থা বেঙ্গল প্লাস্টিকের স্টলেও। এখানে বিভিন্ন পণ্যে ২০-৩০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। খুচরা স্টলগুলোর মধ্যে মিয়াকু তাদের স্টলে একটি পণ্য কিনলে ১০টি ফ্রি’র অফার দিয়েছে। অর্থাৎ একটি ২১ হাজার ৫০০ টাকার ওভেন কিনলে টিভি, হটপট, রুটি মেকারসহ ১০টি পণ্য ফ্রি দিচ্ছে তারা। প্রায় একই ধরনের পণ্য ১০টি ফ্রি দেয়া হচ্ছে একটি ২২ হাজার টাকা দামের ইলেক্ট্রিক চুলা কিনলে। যারা মেলায় এই অফারটি গ্রহণ করবে তাদের বাসায় গিয়ে চুলাসহ সব ধরনের পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মেলার উত্তর দিকে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও শরীফ মেলামাইন, শাইনপুকুর সিরামিকসহ সবধরনের স্টলগুলোতে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। জুয়েলারি দোকানগুলোর মধ্যে ছোট দোকানগুলোতে মেয়েদের চুড়ি, চেইন, বালা, ব্রেসলেটসহ পণ্যগুলোতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এসব দোকানে কর্মীরা তাদের ছাড়ের কথাগুলো উচ্চ কন্ঠে বলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন। থাই-স্টল লিলি ফ্যাশন, যে কোন পণ্য কিনলেই তারা ৫০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে ক্রেতাদের।
মেলায় কসমেটিকস পণ্যের বিক্রি প্রসঙ্গে কথা হয় প্রেমা কসমেটিকস এর বিক্রয়কর্মী জাহিদের সঙ্গে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে বেচা-কেনা বেড়েছে। তবে গতবছরের তুলনায় এবারের মেলায় দিগুন বিক্রি হবে বলে জানান তিনি। এদিকে বাণিজ্য মেলায় দেশি বিদেশি পণ্যের ভিড়ে পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) নিজস্ব প্যাভিলিয়নে রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ২৪টি স্টল। প্রতিটিতে স্টলে ছিল উপচেপড়া ভিড়। তুলনামূলক কম দাম থাকায় অনেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের পণ্যটি। শো পিস, শপিং ব্যাগ, হ্যান্ড ব্যাগ, পর্দা, টেবিল ম্যাট, ফ্লোর ম্যাট, মেয়েদের গহনা, সেন্ডেলসহ পাটের তৈরি বাহারি পণ্য। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এসব পণ্য।উল্লেখ্য, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে ১ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ মেলা চলবে এক মাস। বাণিজ্য মেলার প্রধান গেট দিয়ে ঢোকার পরই চোখে পড়বে ওয়ালটন মেগা প্যাভিলিয়ন।