খেতে পারেন সুস্বাদু ও পুষ্টিকর লাউ

প্রকাশ: ২০১৭-০২-০৬ ১২:৫৮:৫৭


Lauপ্রাচীন কাল থেকে চাষ হওয়া সবজির একটি লাউ; এর জন্ম আফ্রিকায়। বর্তমানে আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় তরকারি লাউ। একই সঙ্গে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি এটি। ঝোল, লাবড়া, নিরামিষ, ভাজি কিংবা সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায় এ তরকারি। প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ২.৫ গ্রাম, প্রোটিন ০.২ গ্রাম, ফ্যাট ০.৬ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০ মি.গ্রা., ফসফরাস ১০ মি.গ্রা., পটাশিয়াম ৮৭ মি.গ্রা., নিকোটিনিক অ্যাসিড ০.২ মি.গ্রা.।

এছাড়া লাউয়ে আছে খনিজ লবণ, ভিটামিন বি-১, বি-২, আয়রন। এ কারণেই লাউয়ের ইংরেজি নাম দেওয়া হয়েছে। কচি লাউয়ের রং হালকা সবুজ, ভেতরে সাদা রঙের শাঁস। লাউকে আঞ্চলিক ভাষায় কদু বলা হয়।

লাউয়ের গুণাগুণ:

ওজন কমাতে: আপনি যদি ওজন কমানোর কথা ভেবে থাকেন তাহলে খাবার তালিকায় লাউ রাখুন। লাউ একটি কম ক্যালোরি সম্পন্ন খাবার। লাউয়ের ৯৬ শতাংশই পানি। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে এবং খুব কম ক্যালোরি থাকে; যা ওজন কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। স্বাদ দেওয়ার পাশাপাশি শরীরে কম ক্যালোরি যুক্ত করবে লাউ।

হজমে সাহায্য করে: লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার আছে। দ্রবণীয় ফাইবার সহজে খাবার হজম করতে সাহায্য করে এবং হজম সংক্রান্ত সব সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। এছাড়া নিয়মিত লাউ খেলে অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়। আর অদ্রবণীয় ফাইবার পাইলসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

শরীর ঠাণ্ডা রাখে: লাউ এর মূল উপাদান পানি। তাই লাউ খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। নিয়মিত সূর্যের আলোতে কাজ এবং দীর্ঘ সময় রোদে থাকার পর লাউ তরকারি খেলে শরীর ঠাণ্ডা হয়। শরীরের ভেতরের অস্বস্তি কমে। গরমের কারণে শরীর থেকে যে পানি বের হয়ে যায়- তার অনেকটাই পূরণ করতে পারে লাউ। এতে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে।

ত্বক ভালো করে: লাউয়ে আছে প্রাকৃতিক প্রোটিন ও ভিটামিন। তাই ভেতর থেকে ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে লাউ। ত্বকের তৈলাক্ততা সমস্যা কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এ সবজি। লাউ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট পরিষ্কার করে বলে মুখে ব্রনের প্রবণতাও কমে যায়।

পানি শূন্যতা দূর করে: জ্বর, ডায়রিয়া ও অন্যান্য বড় ধরনের অসুখে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয় বলে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এতে কিডনিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পানি শূন্যতা দেখা দিলেই প্রচুর পরিমাণে লাউ তরকারি খাওয়া উচিৎ। এতে শরীরের পানি শূন্যতা দূর হয় এবং শরীর সতেজ থাকে।

প্রসাবের জ্বালা-পোড়া কমায়: যাদের প্রসাবে জ্বালা-পোড়ার সমস্যা আছে কিংবা প্রসাব হলদে হয়- তাদের নিয়মিত লাউ খাওয়া উচিৎ। নিয়মিত লাউ খেলে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

লাউ শাক:

লাউয়ের মতো লাউ শাকেরও নানান রকমের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। গর্ভস্থ শিশু, সংক্রমণ, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য রোগ-প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে এ শাখ।

১. ফলিক এসিড সমৃদ্ধ একটি খাবার লাউ শাক। গর্ভস্থ শিশুর স্পাইনাল কর্ড এবং মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ফলিক এসিডের অভাবে গর্ভস্থ শিশুর স্পাইনাল কর্ডের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়; ফলে প্যারালাইসিস, মস্তিষ্ক বিকৃতি অথবা মৃত শিশুর জন্ম হতে পারে।

২. লাউ শাকে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন-সি রয়েছে। ঠাণ্ডা এবং যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে ভিটামিন-সি। লাউ শাকে যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ থাকে। লাউ শাকের আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে এবং পাইলস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৩. উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকায় অস্টিওপোরেসিস এবং অন্যান্য ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত রোগের ঝুঁকি কমায় লাউ শাক।

৪. কোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পটাসিয়াম; যা শরীরে তরলের মাত্রা ঠিক রাখে, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। লাউ শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে; যা হাড় শক্ত ও মজবুত করে।

৫. লাউ শাকে প্রচুর আয়রন রয়েছে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ এবং লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।