[caption id="attachment_36803" align="alignright" width="446"] প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। ফাইল ছবি[/caption]
হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাকে ১০০ কোটি রুপি জরিমানা করেছিল বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত। গতকাল সেই রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। মূলত যে ৬৬.৬৫ কোটি রুপির দুর্নীতি মামলায় শশীকলা ও তার দুই আত্মীয়কে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত, সেই মামলার আসল অভিযুক্ত ছিলেন জয়ললিতা। বাকি তিন জনের মতো তাকেও চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত। সঙ্গে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা। এবার সেই রায়ই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
৫০০ পৃষ্ঠার রায়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে, কিভাবে জয়ললিতা হিসাব-বহির্ভূত সম্পত্তি জড়ো করেছিলেন। শশীকলা ও অন্যেরা হয়েছিলেন শুধুমাত্র পরিস্থিতির শিকার। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতে নিজের বেআইনি সম্পত্তি শশীকলা, শশীর আত্মীয় ও তাদের মালিকানাধীন সংস্থার নামে লিখে দিয়েছিলেন জয়ললিতা। শশীকলারা সেই কাজে মদত দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু আইনের চোখে এই মামলার মূল হোতা আম্মা খ্যাত জয়ললিতা।
আইনজীবীদের মতে, জয়ললিতার জন্য ধার্য ১০০ কোটি রুপি জরিমানা আদায় করা হবে। বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় সংস্থার নামে যে-সব সম্পত্তি রয়েছে, সেগুলো অধিগ্রহণ করা হবে। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিট থেকে জরিমানা আদায় হবে। বাজেয়াপ্ত করা হবে তার সোনা আর হীরের অলংকার।
২০১৬ সালের মে মাসে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে হলফনামায় জয়ললিতা জানিয়েছিলেন, তার অলংকারের মূল্য ৪১.৬৩ কোটি রুপি। এছাড়া তার নামে বেশ কয়েকটি সংস্থা, প্রচুর আবাদি জমি ও সাতটি গাড়ি রয়েছে। সব মিলিয়ে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দাম ১১৩.৭৩ কোটি রুপি।
তামিলনাড়ুর আইনজীবীদের মতে, জয়ললিতার এই বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেই জরিমানার ১০০ কোটি রুপি আদায় করা হবে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে হাত দেওয়া হবে না। যেমন, পোয়েজ গার্ডেনের বাড়ি, যা পেয়েছিলেন তার মা এন আর সন্ধ্যার কাছ থেকে। পারিবারিক সূত্রে কিছু টাকা, গয়নাও পেয়েছিলেন তিনি।
জয়ললিতার স্বামী-সন্তান নেই। তাই হিন্দু উত্তরাধিকার আইন মেনে তার ভাই, বোন বা তাদের ছেলেমেয়ে ওই ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি’র মালিকানা দাবি করতে পারেন।
যদিও আম্মার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক উত্তরসুরি পনীরসেলভম দাবি করেন, সব দোষ শশীকলার। তিনি তার বোনের ছেলে ভি এন সুধাকরনের বিয়ের ধুমধাম আয়োজন করতে গিয়েই সব বিপত্তি ঘটিয়েছেন। আম্মা ছিলেন নিষ্পাপ। শশীকলাই তাকে দিয়ে বেআইনি কাজ করিয়েছেন।
শশীকলা এবং বাকি দুইজন জয়ললিতার সঙ্গেই থাকতেন। জয়ার সঙ্গে এদের ‘অবিচ্ছেদ্য যোগ’-এর সমস্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে আদালতে। আইনজীবীরা জানান, কারাদণ্ডের মেয়াদ না-বাড়লেও সরকার জয়ললিতার জন্য ধার্য ১০০ কোটি রুপি জরিমানা আদায় করবে। একই ভাবে শশীকলাসহ বাকি তিন জনের জন্য ধার্য ৩০ কোটি রুপিও আদায় করা হবে।
তামিলনাড়ুর রাজনীতিকেরা বলছেন, প্রয়াত জয়ললিতা এর আগেও দুর্নীতির বেশ কিছু মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। আবার বেরিয়েও আসেন। নিজের ক্যারিশমা ও জনদরদি নীতিতে সেই দুর্নীতির কালিমা বেমালুম ধুয়ে ফেলতেন তিনি।