নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ ‘সহায়ক সরকার’ ব্যবস্থার রূপরেখা দেওয়ার কথা বললেও এ বিষয়ে এখনো দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
দলীয় ফেরামে এ নিয়ে আলোচনা শেষেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
শনিবার দুপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয়তাবাদী তাঁতীদলের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিতে যান বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখনো আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বসি নাই। দলের মধ্যে নানা রঙ, নানা ধরনের ও নানা মতের লোক আছে। কে কী ভাবছে, সেটা আমরা জানি না। পত্রিকার ভাষায় যেটা আসে তা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে আমরা এ বিষয়ে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেব। বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিবে। এখন পর্যন্ত তা চূড়ান্ত করা হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেই বিএনপি ‘সহায়ক সরকারের’ রূপরেখা দেবে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিষয়টিকে নাকচ করে দেন গয়েশ্বর।
উল্টো তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যদি শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যেতে হয়, তাহলে ৫ বছর পরে কেন? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেই যাওয়া যেত?’
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে তা আদালতের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও মোকাবিলার কথা বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার একটা উদ্দেশ্য আছে। এসব মামলা রাজনৈতিক কারণে। আমাদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এসব করা হচ্ছে। এসব মামলা আমরা আদালতের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।’
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘এক-এগারোর সরকারের সময়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যতটা মামলা হয়েছিল, তার চেয়ে দ্বিগুণ মামলা ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। তিনি প্যারোলে জামিন নিয়ে নির্বাচন করেছেন। ওই অবস্থায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মামলাগুলো থেকে হাইকোর্ট তাকে দায়মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলাগুলো সচল করে। এ কারণে বলছি, এসব মামলায় সরকারের একটা উদ্দেশ্য আছে।’
একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের যে কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে দ্বিতম পোষণ করেন দলটির এই নীতিনির্ধারক।
‘সংবিধানের আলোকে পরপর দুবার নির্বাচনে না গেলে নিবন্ধন বাতিল হয়। কিন্তু আজকে নৌকা আর ধানের শীষ জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে। আমাদের প্রার্থী তো ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। যখন এটা স্থানীয় নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হয়, তখন এ কথা টেকে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আগামী নির্বাচনও যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো হয় তাহলে সে নির্বাচনেও ভোটাররা যাবে না। এ ধরনের নির্বাচন করে তারা (আওয়ামী লীগ) যদি টিকে থাকতে চায় টিকে থাকুক। তবে এটা বলতে পারি, খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না।’
এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সহ-সাংগঠনিক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, তাঁতীদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।