এক সময়ে মুঘল সাম্রাজ্যের আওতায় ছিল বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ। প্রবল প্রভাবশালী এই সাম্রাজ্যের বার্ষিক রাজস্ব ছিল চার হাজার টন রুপার চেয়েও বেশি। বিশ্বের মোট জিডিপির ২৫ শতাংশ একাই যোগান দিতো সম্রাট আকবর। সেই সময়ে ইউরোপের বিলাসবহুল শ্রেনিও মুঘল সম্রাজ্যের ধারের কাছে ঘেঁষতে পারতো না।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই মুঘল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারীদের বাস এখন বস্তিতে। তাদের মাসিক আয় মাত্র ছয় হাজার রুপি।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৩৭ সালে শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর সিংহাসনে বসেছিলেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হয় সিপাহি বিদ্রোহ। সিংহাসনচ্যুত মুঘল সম্রাটের জায়্গা হয় দিল্লির জাফর মহলে। অবশেষে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে তাকে রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠানো হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। শেষ মুঘল সম্রাটের সঙ্গে ছিলেন তার এক স্ত্রী জিনাত মহল এবং পরিবারের কয়েকজন সদস্য। রেঙ্গুনে ১৯৯১ সালে এক নির্মাণকাজের সময়ে আবিষ্কৃত হয় শাহ জাফর, তার স্ত্রীর ও তাদের এক নাতনির সমাধি।
এদিকে ৩০০ বছরের মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েন মুঘল বংশধরেরা। অনেকেই সেই সময়ে ভারত ছেড়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্ববর্তী পাকিস্তানে। শোনা যায়‚ কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রায় ৭০ জন মুঘল বংশের উত্তরসূরী।
সম্প্রতি তাদের মধ্যে থেকে আলোচনায় আসেন সুলতানা বেগম। সুলতানার দাবি‚ তিনি মুঘল বেগম। শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের নাতির পুত্রবধূ। অর্থাৎ সুলতানার শ্বশুরের দাদা ছিলেন নির্বাসিত শেষ মুঘল সম্রাট। প্রমাণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন কিছু পারিবারিক নথি ও ছবি। সেসব এখন শুধু ইতিহাসই নয়‚ বলা ভাল এই পরিবারের কাছে প্রাগৈতিহাসিক। মুঘল উত্তরসূরী সুলতানার বাস হাওড়ার এক বস্তিতে। পাঁচ মেয়ের মধ্যে একজনের এখনও বিয়ে হয়নি, রয়েছে এক ছেলে ও তার পরিবার।
সুলতানা তার স্বামী বিদার বখতের একটি ছবি দেখিয়ে দাবি করেন, ‘আমার স্বামী আমাকে বলেছিলেন, যে আমরা সম্মানিত মুঘল বংশের উত্তরাধিকারী। আমরা কখনোও কারো কাছে ভিক্ষা চাই না।’
১৯৮০ সালে মারা যান সুলতানার স্বামী প্রিন্স মির্জা বিদার বখত। এতে তাদের অভাব আরও তীব্র হয়েছে। একসময়ে চায়ের দোকান চালাতেন সুলতানা। এখন সেই দোকানও নেই। ভরসা শুধুমাত্র স্বামীর পেনসনের ছয় হাজার রুপি।
জানা যায়, ২০০৩ সালের আগে পর্যন্ত তারা কোন ধরনের সাহায্যই পায়নি। সেই সময়ে সোনিয়া গান্ধীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়ে তাদের পরিচয় তুলে ধরেছিলেন সুলতানা। সোনিয়া মুঘল বংশের এই উত্তরাধিকারীদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ও একটি অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু সন্ত্রাসী তাদের সেই অ্যাপার্টমেন্টে থেকে উচ্ছেদ করেন।
ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে ছিল মোঘল সম্রাজ্যের বিস্তার। সম্রাট বাবরের হাতে মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হলেও সম্রাট আকবর ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরের শাসনামলে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃতি হয় এই সাম্রাজ্যের। সেই সময়ে তৎকালীন ভারত উপমহাদেশ অর্থনীতিতে অনেক এগিয়ে যায়। অথচ যে আকবরকে বলা হতো "আকবর দ্যা গ্রেট", যে সম্রাট শাহজাহান বিশবছর ধরে তাজমহল বানালেন শ্বেতপাথর আর হীরা-জহরত দিয়ে, তাদের বংশধররা আজ বস্তিবাসী।