প্রায় ১৪ বছর পর শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহিলা আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। ইতিমধ্যেই সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড।
শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি আশরাফুন নেসা মোশাররফ।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারী সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রতি গুরুপ্ত দিচ্ছেন। এজন্য নেত্রী সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে শুক্রবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে মহিলা আওয়ামী লীগ সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আমরা আধুনিক একটা সাংগঠনিক প্রস্ততির অংশ হিসেবে আগামী জাতীয় নির্বাচনী লড়াইয়ে যাতে অংশ নিতে পারি- এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আমাদের সকল সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করতে যাচ্ছি। তার অংশ হিসেবে প্রথমে শনিবার মহিলা আওয়ামী লীগ এবং ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের সম্মেলন হবে।’
সূত্র জানায়, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে কয়েকজন নেত্রীর ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় সংশ্লিষ্টদের। এই তালিকায় রয়েছেন- আইভী রহমানের বড় মেয়ে তানিয়া বখত, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, যুব মহিলা লীগের সাবিনা আক্তার তুহিন, মহিলা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাফিয়া বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা বেগম, প্রচার সম্পাদক রোখসানা শিরিন, প্রাক্তন এমপি ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহেদা তারেক দীপ্তি, ধানমন্ডি থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজিয়া মুস্তফা প্রমুখ।
সূত্র আরো জানায়, এ লক্ষ্যে শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের পরেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন নেসা মোশাররফ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খানকে নিয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা। তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পক্ষে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ইঙ্গিত দেন। এ পরিপেক্ষিতে সভাপতি-সাধারণ উভয়ই নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার সম্মতি জ্ঞাপন করেন বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী ছিলেন আইভী রহমান। ১৯৬৯ সালে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে জাতীয় মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী হন। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও ১৯৮০ সালে সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর পূর্বে আইভি রহমান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে সন্ত্রাসবিরোধী এক সমাবেশে ২১ আগস্ট, ২০০৪ সালে এক গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন। ২৪ আগস্ট, ২০০৪ সালে রাত ২টায় মারা যান তিনি।
বাবা-মা রাজনীতিবিদ হলেও তানিয়া সরাসরি রাজনীতি করেননি। তিনি সামাজিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেন। সম্মেলনের মাধ্যমে তানিয়ার হাতে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্র থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুজন সদস্য রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নেত্রী আইভী রহমানের মেয়েকেই সভাপতি হিসেবেই এখন পর্যন্ত পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।’
২০০৩ সালের ১২ জুলাই সর্বশেষ সম্মেলনে আশরাফুন নেসা মোশাররফকে সভাপতি ও ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হলে পিনু খান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা আওয়ামী লীগের দুই জন নেত্রী বলেন, ‘নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা সকলেই তা মেনে নেব। নেত্রী আজ অবধি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। যতদিন আইভী আপা বেঁচে ছিলেন- ততদিন উনি মহিলা আওয়ামী লীগ নিয়ে নির্ভার ছিলেন। আমরা চাই তিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বই উপহার দেবেন।’