শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
৬১৫ কোটি টাকা ফেরত পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা
প্রকাশিত - মার্চ ১৬, ২০১৭ ১১:৪৪ এএম
বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে আদায় করা ৬১৫ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাংকের করা আপিল আজ বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৪ বিচারপতির বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্ট ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া ৬১৫ কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশ দিয়েছিল। ঐ রায়ে এস. আলম গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ কোটি টাকা, দি কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেড এবং বারাউরা টি কোম্পানি লিমিটেডকে ২৩৭ কোটি ৬৫ লাখ, মেঘনা সিমেন্ট ইন্ড্রাস্ট্রিজকে ৫২ কোটি, বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডকে ১৫ কোটি, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডকে ৯০ লাখ, ইউনিক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজকে ৭০ লাখ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টকে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডকে ৭ কোটি ১০ লাখ, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে ৩৫ কোটি এবং ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের এক পরিচালককে ১৮৯ কোটি ও ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের সত্ত্বাধিকারীকে ৬৫ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়।
এই টাকা যেন ফেরত দিতে না হয় সে জন্য হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে আপিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকের পক্ষে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম এবং বিভিন্ন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী প্রমুখ শুনানি করেন।
শুনানিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অংশ নেয়া আইনজীবীরা বলেন, রাষ্ট্র কোন নাগরিকের কাছ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জোড় করে অর্থ নিতে পারে না। এটা সুশাসন ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে সেই টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথিতে উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং এই টাকা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে দিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করেছে। তারা বলেন, কোন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আইন নির্ধারিত পদ্ধতিতে সরকার অর্থ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোন ভাবেই অর্থ আদায়ের সুযোগ নেই। ফলে বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে টাকা আদায় করা হয়েছে তা বেআইনিভাবেই করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, এই বিষয়টি নিষ্পত্তিতে হাইকোর্টের কোন এখতিয়ার নেই। এটা নিষ্পত্তি করতে হলে সিভিল মামলা করতে হবে। ডিক্রি হতে হবে। তিনি বলেন, সংসদে আইন ছাড়া এ টাকা ফেরৎ দেওয়ার এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। তাছাড়া বিভিন্ন কারণেই এ বিষয়টি রিট মামলায় নিষ্পত্তি করা ঠিক নয়।
শুনানি গ্রহণ করে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ব্যাংকের আপিল খারিজ করে দেন।
আইনজীবীরা বলেছেন, এই রায় ঐতিহাসিক। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বেআইনিভাবে ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে যেভাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছিল তা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়ায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
প্রসঙ্গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জরুরি অবস্থার সময়ে টাস্কফোর্স বিভিণ্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করেন। এই টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কোষাগারে জমা করা হয়।
Copyright © 2024 Sunbd24 - Latest News Update About DSE, CSE Stock market.. All rights reserved.