আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনসহ যৌথ নিরাপত্তা ইস্যুতে সম্ভাব্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারে যুক্তরাজ্য। এমন সম্ভাবনা সামনে রেখে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য প্রথম কৌশলগত সংলাপ।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় এই সংলাপ শুরু হবে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় এই সংলাপে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি বাংলাদেশ জোর দেবে যুক্তরাজ্যে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের ভিসা আবেদন ঢাকায় মূল্যায়নের বিষয়ে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
আগে ঢাকায় ভিসার মূল্যায়ন হলেও বর্তমানে তা হচ্ছে ভারতে। বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠেছে যে, ভারতে মূল্যায়নের কারণে ভিসা পাওয়ার যোগ্য অনেককেই ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ ভিসা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আবারও ঢাকায় ফেরত আনার আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ।
সংলাপে অংশ নিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংলাপে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনসহ যৌথ নিরাপত্তা ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
এর আগে গত ৩ মার্চ ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও এশিয়া প্যাসিফিকবিষয়ক ব্রিটিশ মন্ত্রী অলক শর্মার মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুদেশের মধ্যে কৌশলগত নিরাপত্তা বৈঠক অনুষ্ঠানে ঐকমত্য হয়।
ওই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন দুই মন্ত্রী। দুদেশের মধ্যে নতুন সম্পর্কের মাত্রায় অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক বিষয়ের পাশাপাশি কৌশলগত নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, এখন থেকে দুদেশের মধ্যে নিয়মিত কৌশলগত নিরাপত্তা বৈঠক হতে পারে।
সংলাপ শুরুর আগে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ আয়োজনের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে জানা গেছে।
প্রথম কৌশলগত সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং যুক্তরাজ্যের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দপ্তরের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি সায়মন ম্যাকডোনাল্ড নেতৃত্ব দেবেন। সংলাপে অংশ নিতে সোমবার বাংলাদেশে আসছেন সাইমন ম্যাকডোনাল্ড। তার সফরে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ প্রতি বছর আয়োজনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকও সই হবে।
অনেক আবেদনকারী অভিযোগ করেছেন যে, প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও তাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। যে কারণে কৌশলগত সংলাপে বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করা হবে। ভারতে ভিসা আবেদন মূল্যায়ন না করে আগের মতোই বাংলাদেশে করার আহ্বান জানানো হবে।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল থেকে ভারতে ভিসা মূল্যায়ন শুরুর পর এর বিরুদ্ধে একটি পিটিশনে ১১ হাজার বাংলাদেশি সই করেছে। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি।
ভিসার বিষয়টি ছাড়াও আসন্ন সংলাপে ব্রেক্সিট, বিমানবন্দর নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনায় প্রধান্য পাবে। এ ছাড়া ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়েও আলাপ করতে চায় ঢাকা। যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে আসা বা ব্রেক্সিটের পর বাংলাদেশ অভিন্ন ইইউ বাজারে যে সুবিধা পেয়ে থাকে, সেই একই সুবিধা যুক্তরাজ্যের বাজারেও অব্যাহত চায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো বিমান পরিবহনে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোরালো আহ্বান জানানো হবে এবারের সংলাপে। সংলাপে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ এবং সামরিক সহযোগিতাও গুরুত্ব পাবে।