সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। দুই বাজারেই মূল্য সূচকের সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের লভ্যাংশ ঘোষণার প্রভাবে এ দরপতন হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ১৭৯টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির দাম।
এদিন সব থেকে বেশি দরপতন হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের। তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৫টির দাম বেড়েছে।
অন্যদিকে দরপতন হয়েছে ২৪টিরই। আর আর্থিক খাতের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টির দাম বেড়েছে এবং দরপতন হয়েছে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের। বিমা খাতের ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪টির এবং দরপতন হয়েছে ২৮টির।
ডিএসইতে দরপতনের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টিই রয়েছে ব্যাংক খাতের কোম্পানি। বাকি ৬টির মধ্যে ৪টি বিমা খাতের এবং ২টি আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো মুনাফা করার পরও ইসলামী ব্যাংকের সীমিত লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক সীমিত লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে অন্য ব্যাংকগুলোও হয়তো বিনিয়োগকারীদের ভালো মুনাফা দেবে না। এমন নেতিবাচক গুঞ্জনের কারণে ব্যাংক খাতের কোম্পানির শেয়ারে মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে প্রায় সবকটি ব্যাংকের দরপতন হয়েছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা এবি আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ইসলামী ব্যাংক কী কারণে কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে কোনো একক ব্যাংকের প্রভাবে শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটে থাকলে তা ঠিক নয়।
ডিএসইর পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল ইসলামী ব্যাংক ভালো লভ্যাংশ দিবে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকটি স্মরণকালের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য সব থেকে কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আমার ধারণা এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। যে কারণে প্রায় সবকটি ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য কমে গেছে।
প্রায় একই কথা বলেছেন ডিএসইর আরেক পরিচালক রকিবুর রহমান। তিনি বলেন, পুঁজিবাজরে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। রোববার অধিকাংশ ব্যাংকের দরপতন হয়েছে।
বিনিয়োগকারী মনির হোসনে বলেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক সব থেকে বড় ব্যাংক। এই ব্যাংকটি এবার ভালো মুনাফাও করেছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে মাত্র ১০ শতাংশ। গত ১০ বছরে ইসলামী ব্যাংক এতো কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭৪১ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯৯৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন কমেছে ২২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লংকা বাংলা ফিন্যান্সের শেয়ার। এদিন কোম্পানির ৩৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংকের ৩১ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- আইডিএলসি, ইফাদ অটোস, ওয়ান ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, আইসিবি, ন্যাশনাল পলিমার এবং একমি ল্যাবরেটরিজ।
অপর শেয়ারবাজার সিএসই সিএসসিএক্স সূচক ৬৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৮ পয়েন্টে। বাজারে ৫৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদন হয়েছে। লেনদেন হওয়া ২৩৩টি ইস্যুর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭২টির, কমেছে ১৩৪টির এবং অপরিবর্তীত রয়েছে ২৭টির দাম।