বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশার কথা বলেছেন মক্কার মসজিদুল হারামের সিনিয়র ইমাম মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েম। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দুই দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ছে। এই লড়াই আরও কার্যকরভাবে চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা সম্মেলনে যোগ দিয়ে মক্কা শরিফের ইমাম এ কথা বলেন। মদিনা শরিফের মসজিদে নববির ইমাম আবদুল মহসীন বিন কাশেমও এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। তারা দুই জনই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। এই দুইজনই বক্তব্য দেন আরবিতে। সঙ্গে সঙ্গে সেই বক্তব্য বাংলায় অনুবাদ করে দেন একজন।
এই সমাবেশ উপলক্ষে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং আলেম ওলামারা আসেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দুপুরের পর সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও সকাল থেকেই আলেমদের স্রোত ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী। দুপুরের আগে আগেই ভরে যায় সমাবেশ স্থল।
এই সমাবেশ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিভিন্ন সড়কে বন্ধ করে দেয়া হয় যান চলাচল। ফলে তৈরি হয় যানজট।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইসলামের শিক্ষা নয় জানিয়ে মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েম বলেছেন, যারা জঙ্গিবাদ ছড়াতে ইসলামের নাম ব্যবহার করছে, তাদের মুখোশ খুলে দিতে তার দেশের বাদশাহ কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি, যারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান মক্কা শরিফের ইমাম। তিনি বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) দুই দেশের সম্পর্ক স্থাপনে অনেক উত্তম পদক্ষেপ নিয়েছেন।…আমার বিশ্বাস এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে।’
মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েম বলেন, ‘আমাদের বাদশাহ অঙ্গীকার করেছেন, যেসব দেশে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছড়ানো হচ্ছে তাদের মুখোশ খুলে দেবেন। জঙ্গিবাদকে দমনের জন্য আমরাও পদক্ষেপ নিয়েছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রম আমাদের দেশেও চালানো হয়েছে। আমরাই সর্বপ্রথম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি তাদেরকে দমন করার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব সাহসের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদীরা আমাদের দেশে ঘাঁটি বানাতে পারেনি।’
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা ইসলামবিরোধী জানিয়ে মক্কা শরিফের ইমাম বলেন, ‘নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা অনেক বড় অবরাধ। কোনো মুসলমানকে কোনো মুসলমান হত্যা করতে পারে না। এমনকি বিধর্মীকেও কোনো মুসলমান অন্যায়ভাবে হত্যা করতে পারে না। কোনো মুসলমান যদি কোনো মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তাহলে তার জন্য জাহান্নাম নির্দিষ্ট রয়েছে। এ থেকে কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের দেশে বিধর্মীদেরও হত্যা করা যাবে না। তাদের জান ও মাল হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহ মুসলমানদেরকে দিয়েছেন।’
সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেম বলেন, ‘যারা দেশে অশান্তি নিয়ে আসতে চায়, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা ওয়েল জাহান্নামে (সর্বনিকৃষ্ট দোযখ) যাবে।’ তিনি বলেন, ‘ইসলামে কয়েকটি হারাম কাজ বলা আছে। যারা মানুষকে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে, যারা হত্যা করতে চায়, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের জন্য আজাব রয়েছে। তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনা সম্পর্ক নেই।’
মক্কা শরিফের ইমাম বলেন, ‘দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করা আল্লাহর নেয়ামত। এ জন্য যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য দোয়া করছি। কারণ, আল্লাহর বড় একটি নেয়ামতের দায়িত্ব তারা পেয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘যারা দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে।’