রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ নামের যাত্রীবাহি যে প্রতারণামূলক বাস সার্ভিস ছিল, গতকাল রবিবার থেকে তা সরকারিভাবে বন্ধ করা হয়েছে। অর্থাত্ গতকাল থেকে রাজধানীর সব বাসই লোকাল। এতে অধিকাংশ যাত্রী খুশি হলেও তাদের সেই খুশির আমেজ বেশিক্ষণ থাকেনি বাসে ওঠার পর। কারণ ‘সিটিং’ বা ‘বিরতিহীন’ নাম দিয়ে বাস মালিকরা আগে যে কয়েকগুণ বাড়তি টাকা আদায় করত, এসব বাসে এখনও সেই ‘সিটিং’ এর ভাড়া বহাল আছে। ফলে সাংবাদিক ও অভিযানের সঙ্গে জড়িতদের কাছে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
বিআরটিএ’র আইন অনুযায়ী, বড় বাসের প্রতি কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা ও মিনিবাসের (জ সিরিজ) ১ টাকা ৬০ পয়সা। বড় বাসের ( ব-সিরিজের) সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ৭ টাকা, মিনি বাসের ক্ষেত্রে তা ৫ টাকা।
গতকাল বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধ শুধুমাত্র লোক দেখানো। সিটিংয়ে তো আগে যাত্রীরা অন্তত বসার সুযোগ পেত। এখন সারাপথ দাঁড়িয়ে গেলেও আগের ভাড়াই আদায় করছে কন্ডাক্টররা। ‘শিকড়’ পরিবহনের যাত্রী ফাহিম বলেন, ‘আমি যাত্রাবাড়িতে যাব। কিন্তু আগে যে ভাড়া দিতাম আজও সেই ভাড়াই আমার পকেট থেকে যাচ্ছে। অথচ চলছি লোকাল বাসে। এটা তো সরকারি লাইসেন্স নিয়ে প্রতারণার মতো।’ আমেনা বেগম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আমাদের দু’জনের কাছ থেকে শিকড় পরিবহন ভাড়া নিয়েছে ৫০ টাকা। এই অন্যায়ের প্রতিকার কার কাছে পাব। যারা অভিযান চালাচ্ছে তাদের উচিত ভাড়ার বিষয়টি সবচে গুরুত্ব দিয়ে দেখা। তা না হলে হয়তো যাত্রীরাই আবার সিটিং সার্ভিসের পক্ষে অবস্থান নেবে।’’
অন্যদিকে, ‘বিহঙ্গ’ পরিবহনের যাত্রী পারভিন সুলতানা বলেন, তিনি গতকাল সকালে পুরনো ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে বাসে ওঠেন। নামেন কাওরান বাজারে। তার কাছ থেকে আগের সেই সিটিং সার্ভিসের ভাড়াই (১৫ টাকা) নেয়া হয়েছে। অথচ বাসটি সবগুলো স্টপেজে অপেক্ষা করে ইচ্ছেমত যাত্রী তুলেছে। একই চিত্র মিলেছে, স্বজন, বসুমতি, প্রজাপতি, এভারেষ্ট, স্বাধীন, তানজিল , ট্রাষ্ট পরিবহনের ক্ষেত্রেও।
এদিকে, গণপরিবহনের ‘নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা’ ঠেকাতে এবং ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে সংযোজিত অবৈধ এ্যাঙ্গেল, ধারালো-চোখালো হুক, অননুমোদিত বাম্পারের বিরুদ্ধে গতকাল থেকে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির ভ্রাম্যমান আদালত। এ কারণে সকাল থেকে নগরীতে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে পরিবহন মালিকরা। ফলে বিশেষ করে ভোগান্তিতে পড়তে হয় মহিলা ও অফিসগামী যাত্রীদের। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরে না আসা পর্যন্ত রাজধানীতে ‘সিটিং’ সার্ভিস বন্ধ এবং যানবাহনের বাম্পার অপসারণ ও অন্যান্য অনিয়ম বন্ধে অভিযান চলবে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওস্থ সাতরাস্তার মোড়ে বিআরটিএ’র অভিযান পরিদর্শন কালে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, সবাই নিয়মের মধ্যে এলে কোনো সমস্যা হবে না। ভোগান্তি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজ করবো।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের সঙ্গে আমাদের মালিক সমিতির ৫টি ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে। খুব দ্রুত এসব হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন যাত্রীরা। বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) অতিরিক্ত সচিব নাজমুল আহসান মজুমদার বলেন, গতকাল ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালনত পরিচালিত হয়। বিভিন্ন অভিযোগে ১২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ সময় ৪ জন চালককে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
গত ৪ এপ্রিল গণপরিবহনের ‘নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা’ ঠেকাতে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। বাস মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে লোকাল হিসেবে সব গণপরিবহন চলবে। বাসগুলো প্রত্যেকটি স্টপেজে দাঁড়াবে এবং লোকাল ভাড়া নেবে যাত্রীদের কাছ থেকে।