চিত্রকলা ও ভাস্কর্যশিল্প কোথায় আছে কোন খোঁজ খবর রাখেন? ভাস্কর্য মানে যে কেবল মানুষ কিংবা প্রাণীর আঁকার আকৃতি নয় সেই জ্ঞানটা না থাকলে আপনাকে খুব সহজেই উত্তেজিত করা সম্ভব।
আমার তো মনেহয় আধুনিক চিত্রকলায় আমাদের অংশগ্রহণের এখনই আদর্শ সময়। কেননা পৃথিবী এখন বিমুর্ততায় প্রচুর উতকর্ষতা অর্জন করেছে। আল্লাহ্ বলেছেন যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান?
মোটেও সমান নয়। দুনিয়ার হালচালের সব খোঁজখবর না রাখলে আপনি আসলে একজন পিছিয়ে পরা মানুষ। দুনিয়াতেও বেইল নাই, আখেরাতেও বেইল নাই। আল্লাহ্ আপনাকে সেইভাবে পাত্তাই দেবেন না যেভাবে পাত্তা দেবেন জ্ঞানী এবং আপডেটেড মানুষদেরকে।
বিমুর্ত শিল্পের একটা অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে আমাদের মন। মনের লাল নীল ভাবনা, আলো অন্ধকার কিংবা খুশি-বিষন্নতা। এই কনটেম্পোরারি আর্টে তো জ্যামিতিক গাণিতিক অনেক শেইপ পাওয়া যায় যেগুলো শিল্পকে অন্য এক মাত্রায় পৌঁছে দিচ্ছে।
ভাবনাকে একটা মুর্তমান রূপ দেয়ার যে অনবদ্য চেষ্টা চলছে বিশ্বময় সেখানে কিন্তু আপনার জীব জন্তু বা মানবাকৃতির ভাষ্কর্যের প্রয়োজনীয়তাই নেই। হ্যাঁ- ডাক্তার যেমন শরীর কাটাকুটি করে শিখে নেয় মৌলিক বিষয়গুলো তেমনি আপনাকেও হয়ত শরীরের আঁকার কিংবা তুলির পোঁজ শেখার জন্য হিউম্যান প্যাটার্ণ অথবা প্রকৃতির নানান জিনিসের প্যাটার্ন শিখে ফেলতে হবে। এরপর আপনি স্বাধীন।
আমি আর আমার মা দুজনে মিলে ছোটবেলায় কানের কাঠি, ম্যাচের কাঠি, চুমকি এইসবে আইকা গাম লাগিয়ে জোড়া দিয়ে দিয়ে নানান সুন্দর সুন্দর জিনিস বানাতাম, দেয়ালে টাঙ্গাতাম, সেগুলো ভাষ্কর্য নয়?
আপনি ভয় পান শিল্প সংস্কৃতিতে এলে আপনি কিংবা আপনার অনুজ খারাপ হয়ে যাবে, এখানে ঈমান ধরে রাখতে পারবে না, ঈমান আসলে না থাকলে কোথাও ধরে রাখা যায় না।
আপনি ব্যাবসা করবেন? লেনদেন ঠিক নাই, মাপে কম দেন, ইনসাফ করেন না, পাওনা ঠিক মত দেন না, ঈমান আছে? চাকুরী করেন? ঘুষ নেন? কিংবা অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেন না, এতে ঈমান থাকে? মানুষের সাথে দূর্ব্যাবহার করেন, গালাগালি করেন, বউ পিটান, জামাইকে গালাগালি করেন, কিংবা বাবা মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, ঈমান আছে তো? নাকি ইমান কেবল শিল্প সংস্কৃতির ফুটো দিয়েই বের হয়?
যেদেশের মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নাই, খরা দূর্যোগ আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রাণ যায় হাজার হাজার, সেদেশে ভাষ্কর্য ঈমানের জন্য বিরাট হুমকি হয়, অথচ ভুখা নাংগা মানুষের অভিশাপে ঈমান ঠিক থাকে, আল্লাহর আরশ কাঁপে না- এইটা আমার বিশ্বাস হয় না।
মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় ইসলামী স্থাপত্যকলা, চিত্রকলা ও শিল্পসংস্কৃতি ও ক্রিয়েটিভ সাবজেক্টগুলোকে টেক্সটের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী। যেমনি ভাবে প্লেট, এরিষ্টেটল এবং ইবনে খালদুন পড়ানো হয় তেমনি ভাবে এইসব বিষয়ও জরুরী।
সংস্কৃতির উপাদানে নির্মিত হয় নতুন সভ্যতা। আজকের যে ইসলামী সভ্যতার ইতিহাস আমরা পরি সেখানে শক্তিশালী সংস্কৃতিক ও শৈল্পিক উপাদান না থাকলে এই ইতিহাস নির্মিত হত না হয়ত।
শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে কিংবা বিরোধিতা করে দুনিয়াতে কোন বিপ্লব, নতুন চিন্তা, সভ্যতা সফল হয়নাই। সুতরাং হয়ত আপনি ভাষ্কর্য বানাবেন নয়ত আপনার মন মগজ অন্য কোন ভাস্কর নির্মান করবে। ভেবে দেখুন নিয়ন্ত্রিত হবেন না নিয়ন্ত্রক? প্রভাবান্বিত হবেন না প্রভাবক? সিদ্ধান্ত আপনার। আর ফলাফল ভোগ করবে আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম।
কিছু বিমুর্ত ভাস্কর্যর ছবি দেয়া হল
[gallery ids="39127,39128,39129,39131"]