মানুষ একসময় ‘এশিয়ান টাইগারস’ বা ‘এশিয়ার বাঘ’ বলতে সাধারণত হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানকেই বুঝত বা বোঝাত। এই চার দেশ ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুবাদেই মূলত অমন খ্যাতি পেয়েছিল।
কিন্তু এখন এশিয়ার অর্থনীতিতে বাঘ মানে আরও একটি দেশের নাম মনের মাঝে উঁকি দেয়। নতুন এই দেশটির নাম বাংলাদেশ। কারণ এক দশক ধরে এশিয়ায় যে কয়েকটি দেশের অর্থনীতি সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম একটি; যারা বছরে গড়ে ৬ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের অর্থনীতিতেও শিল্পায়নের সময়ে ঠিক এ রকমটাই দেখা গিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার-এর সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘দেয়ার কুড বি অ্যা নিউ ‘‘এশিয়ান টাইগার’’, হেয়ারস হোয়াই’ শীর্ষক এক নিবন্ধে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এশিয়ার অর্থনীতির নতুন বাঘ হিসেবে বাংলাদেশের আবির্ভাবের সম্ভাবনার কথা।
তবে নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যদি ২০২০ সালের মধ্যে সরকারের নির্ধারিত উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অনুযায়ী অর্থনীতিতে ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায়, তাহলে তৈরি পোশাকের বাইরে ইলেকট্রনিকস ও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে জোর দেওয়া জরুরি। এতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়বে।
ডব্লিউইএফ-বিজনেস ইনসাইডার-এর নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশকে অবধারিতভাবে আরও দুটি কাজ করতে হবে। তা হলো—অবকাঠামো ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন। কারণ অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে সারা দেশে পণ্য পরিবহন করা কঠিন। এ ছাড়া প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে মাত্র ২০ শতাংশ বা ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ বর্তমানে বিদ্যুৎ-সুবিধা পায়। আর কোম্পানিগুলোকে উৎপাদন কর্মকাণ্ড সচল রাখতে সচরাচর নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হয়।
নিবন্ধে বলা হয়, ব্যাপক হারে দুর্নীতি থাকায় বাংলাদেশ ব্যবসায়ের জন্য হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন জায়গাগুলোর একটি। এ জন্য ক্যাপিটাল ইকোনমিকস বাংলাদেশকে দুর্নীতি কমানো, শুল্ক প্রক্রিয়া, জমি অধিগ্রহণ ও বেসরকারি খাতের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছে।
অবশ্য বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে লালফিতার দৌরাত্ম্য কমানোসহ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ জন্য লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন ব্যবসায় শুরুর সময় বর্তমান ১৯ দশমিক ৫ দিন থেকে কমিয়ে ৭ দিনে, নির্মাণকাজের অনুমতি ২৭৮ দিন থেকে ৬০ দিনে, বিদ্যুৎ-সংযোগ প্রাপ্তি ৪০৪ দিন থেকে ২৮ দিনে নামিয়ে আনা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এখন জমি রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন সহজ করা, চুক্তি বাস্তবায়নের সময় কমানো, কর আহরণে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়েও মনোযোগ দিয়েছে। এসব পরিকল্পনা সফল হলে বাংলাদেশ একটি বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হবে।